আইয়ুবের বিরুদ্ধে শরীফের অনুসন্ধান: যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল

0

জালাল রুমি, চট্টগ্রাম থেকে॥ চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। বলা হচ্ছে, মেগা দুর্নীতিবাজদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়ার জন্যই তার এই পরিণতি। তিনিও নিজেকে বলছেন, মজলুম। আর তার এই চাকরিচ্যুতির দিনে আলোচনায় এসেছে আরেকটি নাম। আইয়ুব খান চৌধুরী। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী গ্যাস লিমিটেডের সাবেক এমডি ও বর্তমানে পেট্রোবাংলার পরিচালক। শরীফ উদ্দিনের দাবি গত ৩০শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় আইয়ুব খান আরও কয়েকজনকে নিয়ে তার বাসায় আসেন। তাকে হেনস্তা করেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরিচ্যুত করবেন বলে হুমকি দেন। সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে সেই রাতেই খুলশী থানায় জিডি করেন তিনি। চট্টগ্রামে চাকরির সময় একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনার অনুসন্ধান করেছিলেন শরীফ উদ্দিন। কর্ণফুলী গ্যাস লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করেন তিনি। হাজির করেন একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শরীফের অনুসন্ধানে উঠে আসে, কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরী রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে তার দুই ছেলে আশেক উল্লাহ চৌধুরীকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে মধ্যরাতে কেজিডিসিএল’র সেই আলোচিত ৬০ জনের পদোন্নতির সময় তার দুই ছেলেরও পদোন্নতি হয়।
শরীফের প্রতিবেদনে উঠে আসে, আইয়ুব খান চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ গ্যাস সংযোগসহ নানা অনিয়মে জড়িত। এরমধ্যে কর্ণফুলী গ্যাসে তার নিয়োগটাও ছিল অবৈধ। বয়স জালিয়াতি ও দেওয়ানি মামলায় শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখেই তিনি এই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। শরীফ উদ্দিনের অনুসন্ধানে এসেছে, আইয়ুব খান চৌধুরী পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদে ভুয়া জন্ম তারিখ দিয়ে নিয়োগ পান। ১৯৯১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পত্রিকায় এই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ বছর। আর একাডেমিক সনদপত্র অনুসারে আইয়ুব খানের জন্ম ১৯৬২ সালের ৪ঠা আগস্ট। সেই অনুসারে এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ ১৯৯১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর তার বয়স হয় ২৯ বছর ১ মাস ৭ দিন। যে কারণে তার নিয়োগ পাওয়াটাই ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইয়ুব খান ১৯৮৭ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরমধ্যে ১৯৯১ সালে চেক জালিয়াতির একটি মামলায় ব্যাংক থেকে তার চাকরি চলে যায় ও ৩ মাসের জেল হয়। জেল থেকে বের হয়ে কয়েক মাসের মাথায় তিনি কর্ণফুলী গ্যাসে যোগদান করেন। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি সেখানে তার দুই ছেলে আশেক উল্লা চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সব ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেন। সেই সময় বোর্ডে সিদ্ধান্ত ছিল বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া, কিন্তু তা না করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরীক্ষা নেন বিধি বহির্ভূতভাবে। উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য ৫ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও তাদের কাছে ছিল না কোনো অভিজ্ঞতার সনদ। এদিকে শরীফের বদলির পর হঠাৎ করে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শরীফের দেয়া প্রতিবেদনের ওপর আবারও তদন্তের আদেশ দেয়া হয়। দুদকের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেককে এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা গত ১৩ই জানুয়ারি পুনরায় ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। এতে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগেরই সত্যতা পাননি বলে দাবি করা হয়। চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে থাকার সময় আমি সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করার চেষ্টা করেছিলাম। যে কারণে আমি দুর্নীতিবাজদের চক্ষুশূল হয়েছিলাম। বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়া হতো। কর্ণফুলী গ্যাসের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর বেশকিছু অনিয়মের বিষয় আমি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিলাম। যার খেসারত শেষ পর্যন্ত আমাকে এভাবে দিতে হলো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইয়ুব খান চৌধুরীকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। এরপর ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।