পরীক্ষার ফলে অসঙ্গতি, ঢাবির দুই শিক্ষককে শাস্তি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিএ সম্মান পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সবুর খান, ও একই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির প্রতিলিপি প্রকাশ করে। প্রতিলিপিতে বলা হয়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ২০১৭ সালের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টার বিএ সম্মান পরীক্ষায় ফলাফলকে ব্যাপক ব্যবধান রেখে চূড়ান্ত করার আনিত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাদের তিন বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হলো। এছাড়া ওই পরীক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় বার টেবুলেশন সংক্রান্ত সব বিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়।
ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৭ সালের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টারের ফলাফল ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ প্রকাশিত হয়। এর টেবুলেটর হিসেবে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। প্রকাশিত ফলাফল কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় এ দুই অধ্যাপকের কাছে মৌখিক আবেদন জানান শিক্ষার্থীরা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে প্রকাশিত ফলাফল পুনরায় নিরীক্ষা করে ২৯ মার্চ সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তাতেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসায় ওই বছরের ৩ মে কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর ফলাফল যাচাইয়ের আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রাথমিক নিরীক্ষায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সাব-কমিটির সভায় ফলাফল জালিয়াতির বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। একই সভায় বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার এবং অধ্যাপক ড. তারিক জিয়াউর রহমান সিরাজীকে নিরীক্ষক হিসেবে ফলাফল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দু’জনের তৈরি করা ফলাফল ও পুনঃপ্রকাশিত ফলাফলের মধ্যে ব্যাপক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। এদিকে, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ওই অসঙ্গতির বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ দুই অধ্যাপককে এর কারণ জানাতে বলা হয়।
পুনঃনিরীক্ষার ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে, ক্লাস উপস্থিতি, মিডটার্ম এবং কোর্স ফাইনাল এ তিন ধরনের নম্বরের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দেখা গেছে। কোথাও আবার মূল নম্বরের থেকেও বেশি দেখানো হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনো কোর্সে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫০ নম্বর পর্যন্ত গরমিল হয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বেলায় প্রকৃত নম্বর থেকে প্রদর্শিত নম্বর কম দেখানো হয়েছে। তবে কয়েক স্থানে প্রকৃত নম্বর থেকে প্রদর্শিত নম্বর বেড়েছে। এক ছাত্রীর ফলাফলে সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি দেখা গেছে। চার কোর্সে তাকে মোট ২৮ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়েছিল। তার ৩০৫ নম্বর কোর্সে বড় অসঙ্গতি দেখা যায়। তার প্রদর্শিত কোর্স ফাইনাল নম্বর ২৮, পরবর্তীতে তিনি সে কোর্সে ৪১ দশমিক ৫০ নম্বর পান। এখানে তাকে ১৩ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ৩০৬, ৩০৭ এবং ৩০৮ নম্বর কোর্সে যথাক্রমে ৩, ৩ দশমিক ৫০ এবং ৮ দশমিক ৫০ নম্বর কম দেওয়া হয়। ৩০৮ নম্বর কোর্সে এক ছাত্র ৪৪ দশমিক ৫০ পান। পরে তার ফলাফল বেড়ে হয় ৪৭ দশমিক ৫০। ৩০৭ নম্বর কোর্সে ফাইনাল পরীক্ষায় সূর্যসেন হলের শাহিন আলম নামে এক ছাত্র ২৩ পেলেও পুনঃপরীক্ষায় তিনি পান ২৯। ৩০৫ নম্বর কোর্সে যে শিক্ষার্থী ৪০ দশমিক ৫০ পান তিনি পুনঃপরীক্ষণে পান ৪২ নম্বর। তবে প্রদর্শিত নম্বর ছাড়াও পুনঃপরীক্ষণের ফলে অনেকেই বিভিন্ন কোর্সে কম নম্বরও পেয়েছিলেন। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর ৩০৭ নম্বর কোর্সে প্রদর্শিত নম্বর ৪২ কিন্তু তার প্রকৃত নম্বর ৩১ দশমিক ৫০। এখানে ১০ দশমিক ৫০ নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। তাদের টেবুলেটিং করা এ ফলাফলে দেখা যায়, সর্বমোট ১১ জন রোলধারী শিক্ষার্থীর চারটি কোর্সের ৩২টি স্থানে প্রাপ্ত নম্বর কমবেশি করার প্রমাণ মেলে। শৃঙ্খলা সাব কমিটির নির্দেশক্রমে ২০১৮ সালের ৩০ সংশোধিত পুনঃফলাফল প্রকাশ করা হয়। পুনঃপ্রকাশিত ফলাফলে সাতজনের জিপিএ ও সিজিপিএ পরিবর্তন ও দুই জনের মার্কশিট সংশোধনপূর্বক ফলাফল ঘোষিত হয়।