বন্দুকযুদ্ধে সেনা সদস্য ও তিন সন্ত্রাসী নিহত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বান্দরবানের রুমা সেনা জোনের আওতাভুক্ত বড়থলি পাড়াসংলগ্ন বথি ম্রোপাড়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে উভয় পক্ষের চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান এবং অন্য তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের সদস্য। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রুমা সেনা জোনের দায়িত্বরত ২৮ বীর ব্যাটালিয়নের একটি বিশেষ টহল দলের সঙ্গে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ ঘটে। এ সময় সেনাবাহিনীর অন্য এক সৈনিক ফিরোজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে সামরিক হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিহত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানকে গতকাল সন্ধ্যায় পটুয়াখালীতে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে তাঁর লাশ পটুয়াখালী নেওয়া হলে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
বান্দরবানের স্থানীয় সূত্রগুলো নিহত তিন সন্ত্রাসীর নাম-পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। এরা হলেন- রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের নিয়ক্ষ্যং পাড়ার বাসিন্দা চ মং প্রু, রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার জয় চাকমা ও বড়কল উপজেলার দিলীপ চাকমা। সূত্রগুলো জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পরিচয়ে তাদের প্রায়ই রুমা বাজারে এসে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মূল দলের সক্রিয় ক্যাডার। তবে এ বিষয়ে জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে বান্দরবান সেনা রিজিয়নে আজ সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়। এতে বলা হয়- ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও আনসারের একটি যৌথ দল সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাখইপাড়া ও বথিপাড়ায় টহল দেওয়ার সময় লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা সেনা টহল লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের মাথায় এবং সৈনিক ফিরোজ হোসেনের পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে সেনা সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। কিছুক্ষণ গুলিবিনিময়ের পর সন্ত্রাসী দল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তল্লাশি চালিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানরা সন্ত্রাসীদের তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান। বর্তমানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশে তল্লাশি জোরদার করেছেন। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, বথিপাড়ায় নিহত তিন সন্ত্রাসীর লাশ গতকাল সকালে রুমা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে ১টি সাব-মেশিনগান, ২৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি, ৩টি অ্যামোনিশন ম্যাগাজিন, ৩টি গাদা বন্দুক, গাদা বন্দুকের ৫ রাউন্ড গুলি, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি বান্ডুলিয়ার, ৪ জোড়া জলপাই রঙের ইউনিফর্ম ও নগদ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, গ্রামের বাড়িতে মাতম : বান্দরবানে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের লাশ পটুয়াখালীর বাড়ি ‘সেনা নিকেতনে’ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে লাশ পটুয়াখালী স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। সেখান থেকে লাশ বাড়ি নেওয়া হয়। পৌনে ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার দেওয়ার পর লাশবাহী কফিন জাতীয় ও সেনাবাহিনীর পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। সেনা সদস্য হাবিবুর রহমানের নিহতের সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। নিহত হাবিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ‘সেনা নিকেতনে’ গিয়ে দেখা যায় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীর ভিড়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুরে। তিনি পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বহালগাছিয়ায় বাড়ি করেন। হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল চাকরি শেষে এখানেই সবাইকে নিয়ে বসবাস করবেন আব্বু। গতকাল (বুধবার) রাতে আব্বুর সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তিনি বলেন “আব্বু আমি এক জায়গায় যাচ্ছি, যদি দাবি-দাওয়া থাকে মাফ করে দিও”।’ হাবিবুর রহমান মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর ছোট ছেলে সেনাবাহিনীর সৈনিক।আইএসপিআর আরও জানায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সেনা সদস্যরা নিরীহ পার্বত্য জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর রয়েছেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান আঞ্চলিক দলসমূহ হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি ইত্যাদি দুষ্কর্ম পরিচালনার মাধ্যমে পাহাড়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে; যা পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বুকের রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভূখন্ডের অখন্ডতা রক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বদ্ধপরিকর।