২৭ বছর পর বাবার মতো ছেলেকেও হাতুড়িপেটা করে হত্যা একই পরিবারের

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের শার্শা উপজেলার কন্যাদাহ গ্রামে সাইফুল ইসলাম মুকুল (৪০) নামে এক যুবদলকর্মীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আজ থেকে ২৭ বছর আগে ওই যুবদল কর্মীর পিতা আব্দুল আজিজ গাইনকেও একইভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিলো একই দলের সন্ত্রাসীরা। এই দুটি হত্যাকান্ডের সাথেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন নামে এক জনপ্রতিনিধির আশ্রিত সন্ত্রাসীরা জড়িত বলে পরিবার ও স্থানীয় গ্রামবাসী দাবি করেছেন। পুলিশ সর্বশেষ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার হাসানুজ্জামানসহ তিনজনকে আটক করেছে।
নিহত যুবদলকর্মী সাইফুল ইসললাম মুকুলের নামাজে জানাজায় গতকাল শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ দলটির জেলা ও উপজেলা শাখার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। এ সময় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে কন্যাদাহ গ্রামে ১০/১২ জন মিলে সাইফুল ইসলাম মুকুল ও তার ভাই শরিফুল ইসলাম বকুলকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মুকুলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান মুকুল। এ ব্যাপারে নিহতের মা ছায়রা বেগম বাদী হয়ে শার্শা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার মূল অভিযুক্ত হাসান মেম্বার, তাজউদ্দিন ও কামরুজ্জামানকে শুক্রবার দুুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শার্শা থানার ওসি শেখ মো. মনিরুজ্জামান।
নিহতের স্বজনরা জানান, উলাশী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আইনাল হোসেনের ভাই আইয়ুব হোসেন ১৯৯৭ সালে খুন হন। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কন্যাদাহ গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় যুবদল নেতা আবদুল আজিজ গাইনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আইনাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই ঘটনার ২৭ বছর পর আবদুল আজিজের ছেলে মুকুলকেও একইভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।
স্থানীয়রা বলছেন, নিহত মুকুলের ভাগ্নে নয়নের সাথে ইউপি মেম্বার হাসানুজ্জামানের পরিবারের এক মেয়ের প্রেম হয় বলে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এ বিষয়ে হাসানুজ্জামান সালিশ ডেকে নয়নকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা নেয়। ভয়ে সেখানে নয়ন হাজির না হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এ ঘটনায় বুধবার হাসানুজ্জামান তার সহযোগীদের নিয়ে নয়নের মামা শরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে নিজের গরুর খামারে আটকে রাখেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি হাতুড়ি পেটা করা হয়। খবর পেয়ে শরিফুলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম মুকুল তাকে উদ্ধার করতে সেখানে গেলে হাসানুজ্জামান বিদেশি টর্চলাইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। হাসানুজ্জামানের সহযোগীরাও তাকে এলোপাতাড়ি হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকেন। মুকুল এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে হাসানুজ্জামান ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান। পরে দুই ভাইকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুকুলকে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
এদিকে, শনিবার মুকুলের লাশ তার গ্রাম কন্যাদহে পৌঁছালে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুপুরে নামাজে জানাজায় অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী। এ সময় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ওই এলাকা থেকে বিএনপির নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। পিতার পর ছেলেকেও একই কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধ এ সরকারের কাছে বিচার চাই না। একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছে এর বিচার চাই। বিস্তীর্ণ এই জনপদের মজলুম মানুষকে তিনি যেনো হেফাজত করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব হত্যাকা-ের বিচার এখন না হলেও একদিন না একদিন হবেই।
জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি নুরুজ্জামান লিটন, যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।
হত্যাকা-ের বিষয়ে শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান জানান, কন্যাদাহের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ প্রধান আসামি হাসানুজ্জামানসহ ৩ জনকে আটক করেছে। বাকি আসামিদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।