ঘূর্ণিঝড়ে ঝুঁকির মুখে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গা

0

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা ॥ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলের নদ নদীর পানি অস্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ৫ ফুট বেড়েছে। এতে সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যায়। এদিকে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি আরও বাড়লে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও প্রাণিকুল এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকের মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার সকাল থেকে মোংলাসহ সুন্দরবন উপকূলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ঝড়ো হওয়ার পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। জাহাজ ও জেটিতে মালামাল ওঠানামাসহ মোংলা বন্দরের সকল অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে পৃথক কট্রোল রুম খোলাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মোংলার আশপাশ এলাকা এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষকে উদ্ধারে এবং নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক। খুলে দেওয়া হয়েছে মসজিদ মন্দির এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ১০৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র। গবাদিপশুসহ মালামাল নিয়ে দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে দেখা গেছ।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্দরে পশুর চ্যানেলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজসমূহকে সমুদ্রের কাছাকাছি নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মাকরুজ্জামান মুন্সী জানান, বন্দরে দেশি-বিদেশি পণ্যবাহী ছয়টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছিল। এ সকল জাহাজের কার্যক্রমসহ বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলার চর জেলে পল্লী টহল ফাড়ির ইনচার্জ ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান জানান, বাতাস ও জোয়ারের তোড়ে দুবলা অফিসের জেটি উড়ে গেছে। কয়েকটি ট্রলার স্রোতে ভেসে গেছে। শেলার চর পুকুরের মধ্যে জোযারের লবণ পানি প্রবেশ করেছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরও বাড়বে। তবে আপাতত বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই। তিনি বলে, বাঘ হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য বনের বিভিন্ন এলাকায় উঁচু টিলা স্থাপন করা রয়েছে। জলোচ্ছ্বাস হলে বন্যপ্রাণীরা ওই সকল টিলায় আশ্রয় ও অবস্থান নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরই মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির ফলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, এরই মধ্যে ১০৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। ১৩ শ স্বেচ্ছাসেবক তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতরা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। উপজেলা ও পৌরসভায় পৃথক দুটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলেও জানান ইউএনও নিশাত তামান্না।