ইসরাইলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র বললো অ্যামনেস্টি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখার দাবি করে ইসরাইল। কিন্তু এমনটা মানতে নারাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, ইসরাইল নিজ দেশের মধ্যে ও অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে থাকা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করে। দেশটির আইন, নীতি ও আচরণে এই বর্ণবাদ ফুটে ওঠে। এ নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে বলা হয়েছে, ইহুদি ইসরাইলিদের সুবিধার্তে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদী আচরণ করে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের আচরণকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।যদিও অ্যামনেস্টির এমন দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে ইসরাইল।
দেশটি উল্টো অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবি তোলার অভিযোগ এনেছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, অ্যামনেস্টি মিথ্যা, অসঙ্গতিপূর্ণ গল্প এবং ইসরাইলবিরোধী কিছু সংস্থার অপ্রমাণিত কিছু দাবির প্রেক্ষিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। এই রিপোর্ট ইসরাইল রাষ্ট্রের টিকে থাকার অধিকারকে অস্বীকার করেছে। তারা ইসরাইলের ক্ষতি করতে পরিকল্পিতভাবে এই চরমপন্থী বক্তব্য প্রদান করেছে। একইসঙ্গে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগও আনে ইসরাইল।
ইসরাইলের নাগরিক মাত্র ৯৪ লাখ। তার ২০ শতাংশেরও বেশি নাগরিক আরব মুসলিম। তারা অনেকেই এখনো নিজেদের ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়া পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে আরও প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে জয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের উপরে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে ইসরাইল। তবে ফিলিস্তিনের আরেকটি অংশ গাজা উপত্যকায় বাস করেন আরও প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। ২০০৫ সালে গাজার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয় ইসরাইল। যদিও জাতিসংঘ এখনো গাজাকে অধিকৃত অঞ্চল হিসেবেই বিবেচনা করে। অধিকৃত হলেও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের রয়েছে আলাদা সরকার ব্যবস্থা। অপরদিকে গাজা শাসন করে সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাস।
এই পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৪০টি ইসরাইলি বসতি রয়েছে যাতে ৬ লাখের বেশি ইহুদি বাস করেন। আন্তর্জাতিক আইনে এই বসতিগুলোকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও ইসরাইল এমন দাবি মানতে নারাজ। দেশটির আইন অনুযায়ী যদিও তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সকল নাগরিকদের সমান অধিকার দেয়ার কথা রয়েছে। ধর্ম কিংবা বর্ণের ভিত্তিতে সুযোগ সুবিধার কোনো তারতম্যের কথা লেখা নেই এতে। কিন্তু অ্যামনেস্টি বলছে, এখনো ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ইহুদিদের থেকে ‘নিচু শ্রেণীর’ বিবেচনা করে। এই পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া পুরোপুরি পদ্ধতিগত। এর ফলে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ও এর অধিকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের সমান অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উপরে নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ইসরাইল এমন অভিযোগও অ্যামনেস্টির রিপোর্টে আনা হয়েছে।
এ রিপোর্ট নিয়ে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ায়ির লাপিদ বলেন, অ্যামনেস্টি সিরিয়াকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র বলে না। অথচ দেশটির সরকার ৫ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। কিংবা তারা ইরানকে কিছু বলে না, লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার দুর্নীতিগ্রস্থ খুনী রাষ্ট্রগুলোকে কিছু বলে না।