মিরাজ-ফ্র্যাঞ্চাইজি দুই পক্ষেরই দায় দেখছে বিসিবি, হবে শুনানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ হুট করেই ম্যাচের তিন ঘণ্টা আগে নিয়মিত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এই ইস্যুতে রবিবার পুরো দিন চট্টগ্রামে ‘নাটক’ মঞ্চস্থ হয়েছে। অধিনায়কত্ব হারানো মিরাজ ঢাকায় ফেরার হুমকিও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের হস্তক্ষেপে চট্টগ্রামে মিরাজ-ফ্র্যাঞ্চাইজি বৈঠকে বসেছিল। সেখানে জানানো হয় ভুল বোঝাবুঝির কারণেই জল এতদূর গড়িয়েছে। বিষয়টির সুরাহা হয়ে গেলেও ঢাকায় ফিরেই শুনানির জন্য বিপিএল গভর্ণিং কাউন্সিলের কাছে যেতে হবে মিরাজ ও চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিরাজের ঝামেলো আপাতত মিটে গেলেও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ছাড় দেবে না কোনও পক্ষকেই। ঘটনা কেন এতদূর গড়ালো, তদন্ত হবে। দুই পক্ষের কথা শুনে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত। প্রাথমিকভাবে দুই পক্ষেরই দায় দেখছে টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি। আজ (সোমবার) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেখ সোহেল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঘটনাটা আমরা গতকাল (রবিবার) শুনেছি এবং আলাপ-আলোচনা করেছি। আমি ছিলাম, মল্লিক ভাই (ইসমাইল হায়দার) ছিল, সিইও (নিজামউদ্দিন চৌধুরী) ছিল। সবার সঙ্গে কথা বলার পর আমরা যেটা দেখেছি, মিরাজেরও এখানে দায় আছে, ম্যানেজমেন্টেরও দায় আছে। দুই পক্ষই কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হয়।
রবিবার সারাদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মিরাজ। তবে এই আলোচনা দুপুরের মধ্যেই থামিয়ে দিতে পারতো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা না করে মিরাজ ইস্যুটি নিয়ে রাত অব্দি অপেক্ষা করেছে তারা। এখানেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। মিরাজও পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অবশ্যই প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যদি সেটা কেউ না করে, ভবিষ্যতে সেটা খেলোয়াড় হোক আর ফ্র্যাঞ্চাইজি হোক, আমরা তাকে বিপিএলে রাখবো না। কিন্তু এটা তো কোনও সমাধান নয়। এটা টুর্নামেন্টের সম্মান হ্যাম্পার করে। আমরা দুই গ্রুপকেই (মিরাজ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি) হেয়ারিংয়ের জন্য ডেকেছি। দুই পক্ষের কথাই শুনবো।’
অধিনায়ক বদলের ঘটনা ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেটে প্রায়ই ঘটে। কিন্তু চট্টগ্রাম ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে যেভাবে অধিনায়ক বদল করেছে, সেটি নিয়েই প্রশ্ন মিরাজের। এ ঘটনায় মিরাজ চট্টগ্রামের চীফ অপারেটিং অফিসার ইয়াসির আলমকে দায়ী করেছেন। রবিবার তিনি এও ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইয়াসির থাকলে খেলবেন না!
মল্লিক মনে করেন, জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে অধিনায়ক বদলের প্রক্রিয়া আরও সম্মানের সঙ্গে করতে পারতো ফ্র্যাঞ্চাজিটি, ‘প্রথম কথা হচ্ছে এখানে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ পালন করতে হবে এবং সহনশীল হতে হবে। নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির দিকে আমরা আঙুল তুলবো না। আমরা আগে দুই পক্ষের কথা শুনবো, তারপর সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সিও (ইয়াসির আলম) যদি মিরাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ না দেখায়, তাহলে অবশ্যই তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। মিরাজ জাতীয় দলের খেলোয়াড়, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।’
বিপিএলের ২০১২-১৩ মৌসুমেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেবার চট্টগ্রামেই ফ্র্যাঞ্চাইজি চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ম্যাচের আগমুহূর্তে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দল থেকে বাদ দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ আশরাফুলকে। পরে আকসুর তদন্তে বেরিয়ে আসে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়টি। মিরাজকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এমন কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
এ ব্যাপারে মল্লিকের বক্তব্য, ‘আমাদের কাছে এখন অব্দি সন্দেহজনক কিছু আসেনি। কালকে (রবিবার) যখন প্রেস কনফারেন্সটা দেখলাম, সেখানে দুই পক্ষই বললো ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। যতটুকু শুনেছি বোলিং পরিবর্তন নিয়ে কিছু ইস্যু ছিল, ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছু ইস্যু ছিল। এটা আমরা সামনাসামনি না বসে বলতে পারবো না। তাদেরকে আমরা শুনানিতে ডাকবো, পুরো ব্যাপার শুনেই সিদ্ধান্ত নেবো।’