নির্বাচনে রক্তক্ষরণ বন্ধ করুন

0

সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন ধাপে দুই হাজার ২২৬টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৭৯ জনের। তাঁদের মধ্যে দুজন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী, একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী, দুজন সদস্য পদপ্রার্থী ও একজন নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। আহত হয়েছে কয়েক শ মানুষ। সহিংসতায় বিজিবির একজন সদস্য নিহত হওয়াসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়েছেন। নির্বাচন বিশ্লেষকের মতে, ইউপি নির্বাচনে সাধারণত সহিংসতা কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। নির্বাচনের আরো তিনটি ধাপ বাকি রয়েছে। এই তিন ধাপে আরো এক হাজার ৭৬৬টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সহিংসতার ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে শেষ তিন ধাপে আরো কত মানুষকে প্রাণ দিতে হবে কে জানে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদুল হক। রাত ১০টায় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে ফেরার পথে এরশাদুল হক এবং তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক সন্তোষ সরকারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকেলে পাবনার আটঘরিয়ার দেবোত্তর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় ধাপে যশোরের শার্শায় ৩ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন সহিংসতা। বিগত তিন ধাপে বোমাবাজি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাও হয়েছে। অনেক নির্বাচন বিশ্লেষকই মনে করছেন, এবার নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের অপ্রতুলতা ও পুলিশের পক্ষপাত অত্যধিক সহিংসতার জন্য দায়ী। অতীতে বরাবরই প্রধান প্রধান নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হতো এবং সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। বিগত তিন ধাপের নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটি জেলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনের আগেই এই জেলাগুলোকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে সহিংসতার মাত্রা অনেকটাই কম হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চলতি ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচনের আগেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান হলে প্রাণহানির ঘটনা অনেক কম হতো।
আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ইউপি নির্বাচনের আরো তিনটি ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেসব ধাপে যাতে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সহিংসতা প্রতিরোধে নিরপেক্ষভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি সহিংস ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা কোনোভাবেই নির্বাচনের নামে এমন রক্তক্ষয় দেখতে চাই না।