সোয়া দুই ঘণ্টায় ৪১টি মামলার রায় দিলেন বিচারক

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের এক আদালতে ৪১টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) যশোর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক শিমুল কুমার বিশ্বাস এসব মামলার রায় ঘোষণা করেন। অস্ত্র, মাদক ও চেক ডিজঅনারের বিভিন্ন মামলায় এসব রায় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আদালতের এপিপি লতিফা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছেন বিচারক। এই রায় ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রায়গুলো ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণায় ২৬টি মামলায় সাজা ও ১৫ মামলায় আসামিদের খালাস দেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ভীমসেন দাস।
ভীমসেন দাস বলেন, করোনাকালে বেশ কিছু মামলার রায় মুলতবি ছিল। বিচারক সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে বসেন। এরপর দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করেন। দুপুরে বিরতি ছাড়াই বিকাল পর্যন্ত রায়গুলো ঘোষণা করেন। একদিনে ৪১টি মামলার রায় ঘোষণাকে নজিরবিহীন বলেছেন যশোরের সিনিয়র আইনজীবী মাহবুব আলম বাচ্চু। তিনি বলেন, যশোরে একদিনে এত সংখ্যক মামলার রায় আগে হয়নি। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আদালতের বিচারক এর আগে একদিনে ২০টি মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। আদালত সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলার সীতারামপুর গ্রামের শেখ আব্দুল করীমের ছেলে কবীর হোসেন ওরফে ঠান্ডুকে অস্ত্র মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে পলাতক রেশমা বেগমকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, শংকরপুর এলাকার ইবাদ আলীর ছেলে পলাতক ইমরান খানকে মাদক মামলায় চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, অভয়নগর উপজেলার গোয়াখোলা স্কুলের পাশের বাসিন্দা আব্দুল গণির ছেলে পলাতক আবুল কালাম ওরফে মাসুদ রানাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, শার্শার রাঢ়ীপুকুর গ্রামের মৃত কাওসার আলীর ছেলে পলাতক মফিজুল ইসলামকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। একই আদালত মাদক মামলায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এই আদেশের সাজাপ্রাপ্তরা হলেন শার্শা উপজেলার ইছাপুর গ্রামের আফছার আলীর ছেলে পলাতক মিজানুর রহমান, বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকার ভবেরবেড় গ্রামের মৃত মোকছেদ সরদারের ছেলে পলাতক আলী কদর, মাদারীপুর জেলার পূর্বস্বর গ্রামের কবির মাতব্বরের স্ত্রী পলাতক মমতাজ বেগম, বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকার ঘিবা গ্রামের ইউনুস আলী মোড়লের ছেলে পলাতক আব্দুল আলীম ও একই এলাকার আব্দুল আলীমের স্ত্রী পলাতক আলেয়া বেগম, ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার খাবাসপুর গ্রামের মাধব কুন্ডুর ছেলে পলাতক প্রদীপ কুন্ডু, বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের আকবরের ছেলে পলাতক আলমগীর হোসেন, ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে সিজান মাহমুদ, ঝিকরগাছা মোবারকপুর গ্রামের আলাউদ্দীন আলীর ছেলে পলাতক সালাউদ্দীন, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর গ্রামের মুকুন্দ কুমার দাসের ছেলে পলাতক সনজিৎ দাস, যশোর সদর উপজেলার চোপদারপাড়া গ্রামের আকামত আলীর স্ত্রী পলাতক মালেকা বেগম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবিন্দকাঠী গ্রামের আমজেদ মিস্ত্রির ছেলে পলাতক সিরাজুল মিস্ত্রি, যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার শ্রাবণ রহমান হাসিবের স্ত্রী পলাতক পারভীন আক্তার, শার্শা উপজেলার বাঁগআচড়া গ্রামের কাদের ধাবকের ছেলে পলাতক মিঠু ধাবক, শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে আশাদুল ইসলাম আশা, অভয়নগর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে পলাতক ওহিদুল ইসলাম গাজী ও বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে পলাতক মোহাম্মদ আলম।
এ ছাড়া দুই জনকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন সদর উপজেলার মালিরহাট মাঠপাড়ার মৃত আসানুল হকের ছেলে পলাতক হাসিবুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার সুবারিঘাটা গ্রামের কালীদাসের ছেলে পলাতক অশোক কুমার দাস। পাশাপাশি চেক জালিয়াতি মামলায় যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামের রুহুল আমিন মুন্সির ছেলে হাফেজ নুর মোহাম্মদকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও চেকে উল্লেখিত পাঁচ লাখ টাকা, মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে রুহুল আমিনকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও চেকে উল্লেখিত দেড় লাখ টাকা, ঢাকার পুরাতন পল্টন এলাকার আজহার আলীর ছেলে ইমাম হাসান সাইফকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২৬ মামলায় ২৭ জনকে সাজা দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই আদালত আরও ১৫টি মামলার রায় দেন। ওই মামলায় ১৬ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।