কৃষিতে প্রণোদনা দিতে হবে

0

করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে অনেক দেশের তুলনায় এই ক্ষতির পরিমাণ কম। রফতানি ও প্রবাসী আয় মোটামুটি ঠিক থাকা এবং কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হওয়া এর কারণ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে কর্মপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অবশ্য ভয়ও কম নেই। বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনা আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন। আশংকা সত্য হলে অর্থনীতি আবারো চুপসে যেতে পারে। ওদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেশেও পড়ছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ-পদক্ষেপ এর ফলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, সেটা সহজেই বুঝা যায়। এর মধ্যেই প্রবাসী ও রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। আগামীতে আরো কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দু’খাতেই রফতানি হ্রাসের বিষয়টি স্পষ্ট। এই পর্যায়ে আশার জায়গা একমাত্র কৃষি ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। কৃষিতে কৃষকের উদ্যম-উদ্যোগ ও শ্রমই প্রধান নিয়ামক। কৃষক আপন গরজেই কৃষি কাজ করে। সরকারি সহযোগিতা না পেলেও কৃষি ছাড়ে না। সরকারি সহযোগিতা এক্ষেত্রে তেমন একটা পাওয়াও যায় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিই আমাদের আশংকিত সংকট ও বিপর্যয় থেকে বড়মাপে সুরক্ষা দিতে পারে। কাজেই, কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সমন্বিত ও জোরদার করতে হবে। কৃষক ও গ্রামীণ পর্যায়ে অন্যান্য পণ্যের উৎপাদকরা যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃষি এবং তার উপখাতসমূহ গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তিভূমি রচনা করেছে। ধান, পাট, আখ, রবিশস্য, তেলবীজ, শাক-সবজি, তরিতরকারি ইত্যাদি চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, গবাদী পশু পালন, দুগ্ধ খামার প্রভৃতির প্রসার ঘটেছে। আছে নানারকম কুটির শিল্প, যা গ্রামীণ জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের জীবিকার উপায়। বলা বাহুল্য, কৃষি আমাদের সমগ্র জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়াও বিভিন্ন দরকারী পণ্যের যোগান দিচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি বৃহত্তর জনগণের অর্থনীতি। সেই হিসাবে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন। করোনাকালে বহু মানুষের চাকরি গেছে, বহু মানুষ বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছে, বহু মানুষের আয় কমেছে, বহু মানুষ পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এইসব বেকার, কর্মহীন, অসহায় মানুষকে গ্রামই পরম আদরে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে, প্রবাস থেকে যারা গ্রামে ফিরেছে তাদের কর্মের পথ দেখিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। অনেকেই কৃষিতে হাত লাগিয়েছে, অনেকে বৃক্ষ রোপণ, ফল চাষ, সবজি চাষ, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদী পশু পালন ইত্যাদিতে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। এতে শুধু তাদের আর্থিক সংস্থান ও উন্নতিই হয়নি, বিভিন্ন পণ্যর উৎপাদনও বেড়েছে, যার সুফল গোটা দেশের মানুষ পেয়েছে। গোশত উৎপাদন, হাঁস-মুরগি উৎপাদন এবং শাক-সবজি ও তরিতরকারি উৎপাদনে অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে। এই সব সাফল্য আরো উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে, তাদের উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণীত করছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। এটা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব, যদি কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ নিশ্চিত করা যায়। সরকারের পরিকল্পনায় এখনই বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি।