পেঁয়াজ নিয়ে ভাবতে হবে

0

সংবাদ মাধ্যমে গত সপ্তাহকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়েছে পেঁয়াজ। গতকালও ছিল অনেক খবর। এর মধ্যে উদ্বেগজনক খবর ছিল ভারত সীমান্তে আমদানি করা কয়েকশ’ ট্রাক পেঁয়াজ পঁচে যাচ্ছে। অনর্থক জটিলতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশে পাঠাতে বিলম্ব করার কারণে এই ক্ষতি হচ্ছে। অপর একটি খবর ছিল বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার কারণে ভারতের বাজারে মূল্য ধস হয়েছে। দুটি খবরের মূল্যায়নে স্পষ্ট যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষতি মেনেও বাংলাদেশে পেঁয়াজ দিচ্ছেন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ সুযোগটি নিচ্ছে বাংলাদেশের অসাধু ব্যবসায়ীরাও। গত সপ্তাহে ভারত পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, আর সেই সুযোগে দেশের বাজারকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এক সপ্তাহের মধ্যে ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। সরকার টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। ট্রাকের সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এভাবে দীর্ঘ লাইন দিয়ে পেঁয়াজ কেনা অনেকের পইে সম্ভব হচ্ছে না।
গত বছরও একই সময়ে পেঁয়াজ নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছিল। ভারত নিজেদের ঘাটতি মোকাবেলা করতে গিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহ করতে থাকে। তার সুযোগ নিয়েছিল দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। শুধু গত বছর নয়, প্রায় প্রতিবছরই এই সময়ে এসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকে প্রায় চার মাস ধরে, অর্থাৎ নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত। বিষয়টি সরকারের অজানা নয়। কিন্তু প্রতিবছরই দেখা যায় সংকট শুরু হলেই তাঁরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন। বড় দুর্যোগ না হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও কমবেশি ২৫ লাখ টনের মতোই হয়ে থাকে। জানা যায়, চলতি বছরও চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে সংগ্রহ ও সংরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। আর সেই ঘাটতিটাই আমদানি করতে হয়। আমদানি করা পেঁয়াজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বাকি ৫ থেকে ১০ শতাংশ আসে চীন, মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসর বা অন্য কোনো দেশ থেকে। ভারতেও মৌসুমের শেষ সময়ে ঘাটতি দেখা দেয়। তারা রপ্তানি নিরুৎসাহ বা বন্ধ করে দেয়। এ বছরও রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা আর কয়েকটা দিন আগে কি নেওয়া যেত না? কোনো একক দেশের ওপর এতটা নির্ভরশীল থাকাও যৌক্তিক নয়।
সংকট শুরু হলে দৌড়ঝাঁপ করে খুব বেশি লাভ হয় না। এ জন্য স্থায়ীভাবে বাজার স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নিতে হয়। বছরে যে ছয় থেকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়, সেগুলো সংরণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে আমাদের পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজনই হবে না। একই সঙ্গে কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজের উন্নত জাত ও বীজ সরবরাহ করা গেলে পেঁয়াজের উৎপাদন অনেক বাড়বে। তখন বাংলাদেশ পেঁয়াজ রপ্তানিও করতে পারবে। তার আগে পর্যন্ত মৌসুমের শেষ সময়ে বাজারে যাতে অস্থিরতা না হয়, সে জন্য আগেভাগেই প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করে রাখতে হবে। আমাদের বাজারের চরিত্র কারো অজানা নয়। মজুদদারি, সিন্ডিকেটবাজি এবং আরো অনেক উপায়ে বাজার অস্থিতিশীল করা এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর জন্য অতি সহজ কাজ। সে জন্য বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। নামসর্বস্ব হস্তেেপর জন্য না রেখে টিসিবিকে বাজারে কার্যকর হস্তেেপর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই ভাববে।