সাফল্যের হাসি হারিয়ে যেতে পারে

0

করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। উন্নত-অনুন্নত-নির্বিশেষে প্রায় সব দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন কমে গেছে। উন্নয়নের গতি মন্থর হয়েছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এখানেও অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। ব্যক্তি পর্যায়েও মানুষের আয়-উন্নতি কমে গেছে। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাঁদের পুঁজি হারিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা মানুষ। ফলে, নতুন করে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপেও উঠে এসেছে এমন তথ্য। জরিপের চতুর্থ ধাপের ফলফলে বলা হয়, গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৮ মাসে মোট তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। গত মার্চে এই সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ।
জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে, গত মার্চের তুলনায় গত আগস্টে শহরের বস্তিবাসীর আয় কমেছে ১৮ শতাংশ আর গ্রামের মানুষের আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্র শ্রেণির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশিত কাজ পায়নি। প্রথমবার লকডাউনে ৪৫ শতাংশ পরিবার সামান্য পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা পেলেও দ্বিতীয়বার লকডাউনে এই সহায়তা নেমে এসেছে ২৩ শতাংশে। মহামারির আগে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসব পরিবারে ঋণের পরিমাণ ছিল বার্ষিক আয়ের ১৩ শতাংশের মতো। চলতি বছর আগস্টে এই হার বেড়ে হয়েছে ২৮ শতাংশ। এসব পরিবারের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও অনেক কমে গেছে। পরিবারগুলোয় মাছ, মাংস, দুধ, ফল ইত্যাদি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ কমে গেছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি এসব পরিবারের সন্তানরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে পড়ছে। মেয়েশিশুদের মধ্যে বাল্যবিবাহ অনেক বেড়ে গেছে। গবেষণা ফলাফলে সতর্ক করা হয়েছে, ‘নতুন দরিদ্র’ পরিবারগুলো দীর্ঘ মেয়াদে দারিদ্র্যের কাতারে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় যদি আবারও করোনার নতুন ঢেউ শুরু হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হতে পারে। আগেও কিছু কিছু জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছিল। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক জরিপে উঠে এসেছিল, আত্মনির্ভরশীল কিংবা নিজে ব্যবসা পরিচালনা করে—এমন প্রায় ৭৯.৭ শতাংশ তরুণের মাসিক আয় কমে গেছে। আর চাকরি করে এমন ৫৭.৪ শতাংশ তরুণের বেতন বা আয় কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগের যথেষ্ট অভাব দেখা গেছে। ১৮ মাসে নতুন করে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হার পরও দারিদ্র্য বিমোচনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এতে আমরাও গর্ব বোধ করছি। তবে, সার্বিকভাবে দৈনন্দিন জীবদ্দশায় যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তা সঠিকভাবে মোকাবেলা করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। বেকারের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। অন্যথায় সাফল্যের প্রশংসার হাসি হারিয়ে যেতে পারে।