জননেতা তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0

সুন্দর সাহা॥ যশোর উন্নয়নের যে কোন আলোচনায় যে রাজনীতিককে প্রথমেই স্মরণ করেন জেলার মানুষ সেই জননেতা তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শোকাবহ তৈরি করে তিনি চিরবিদায় নেন। এখবরে এ অঞ্চলের জনতার ঢলে জনসমুদ্রে পরিণত হয় যশোর শহর। সেই জনসমুদ্রের শোকে আর শ্রদ্ধায় জননেতাকে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয় যশোরের কারবালা কবরস্থানে তিন বছর আগে। আজ তাকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করবে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। গণমানুষের নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীকার আন্দোলন সর্বক্ষেত্রে যেমন তারুণ্যে তরিকুল ইসলামের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। তেমনি স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে দেশের যে কোন অসঙ্গতিতে তিনি ছিলেন আপোষহীন। যশোরের উন্নয়নে আজীবন লালন করেছেন স্বপ্ন। যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেছেন তখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তাই যশোরের মানুষকে কোন প্রয়োজনে ছুটতে হয় না বাইরের কোন জেলায়। তরিকুল ইসলামের বাস্তবায়িত স্বপ্নে এ জেলার ছেলে মেয়েরা বাড়ি থেকে খেয়ে শিক্ষা অর্জনে যায় নিজ জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মেডিকেল কলেজে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িতায় আপোষহীন ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
বরেণ্য এ রাজনীতিক ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন যশোর শহরে। তার পিতা আলহাজ আবদুল আজিজ ছিলেন যশোর শহরের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। মা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। পারিবারিক পরিবেশে বাল্যশিক্ষার মাধ্যমে পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। ১৯৫৩ সালে তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬১ সালে জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৬৩ সালে এমএম কলেজ থেকে আইএ, ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬২ সালের কথা। তরিকুল ইসলাম তখন যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী। যশোর শহরের শহীদ মিনারটি ছিল ভাঙাচোরা। অধ্যাপক শরীফ হোসেনের নেতৃত্বে তরিকুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু এবং সহপাঠীরা যশোর সরকারি এমএম কলেজ চত্বরে একটি শহীদ মিনার তৈরি করেছিলেন। শহীদ মিনার তৈরির কারণে তৎকালীন পাক সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন অধ্যাপক শরীফ হোসেন ও তরিকুল ইসলাম। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে তিনি যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন এমএনএ আহম্মদ আলী সর্দারের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য দীর্ঘ ৯ মাস রাজবন্দী হিসেবে তিনি যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন । ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ফের গ্রেফতার হন বরেণ্য এই নেতা। ছাত্র জীবন শেষে কমিউনিস্ট পার্টির নীতি-আদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে না পেরে বেছে নেন নতুন পথ। ১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে কথা বলে যেমন কারাভোগ করেছেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবেও তাঁকে যেতে হয়েছে জেলে। ভাসানী ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য হন তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি পান। রাজনীতিতে ওই অবস্থানে পৌঁছাতে তরিকুল ইসলামকে পার হতে হয়েছে কাঁটা বিছানো বন্ধুর পথ। রাজনীতিতে দৃঢ়চেতা এ নেতা স্বৈরাচার এরশাদ আমলে গ্রেফতারের পর শিকার হন নিষ্ঠুর নির্যাতনের। তিনি কারাভোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের শিকার হয়েছেন বারবার। যশোরে উদীচী হত্যা মামলা, অধুনালুপ্ত রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ডসহ নানা মামলায় রাজনৈতিক আক্রোশে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে তাঁর নাম। ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের মতো গ্রেফতার হন তরিকুল ইসলাম। কারাভোগ করেন দীর্ঘ দেড় বছর। মহাজোট সরকারের আমলেও নতুন নতুন মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার ও কারাভোগ করেছেন। বিএনপিতে তার প্রভাব ও গুরুত্বের কারণে তিনি মামলা ও গ্রেফতারে বারবার লক্ষ্য হয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের।
জননেতা তরিকুল ইসলামের দুর্ভাগ্য যে, তার প্রতিপক্ষরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা নিতে সারাজীবন তাঁকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন। অনেক রকম রটনার মাঝে সাম্প্রদায়িক অভিযোগেও অভিযুক্ত করেছেন। এই অভিযোগে তাঁকে বিচারের আওতায় আনতে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে যশোরাঞ্চলের সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় সেই কমিশনে হাজির হয়ে তরিকুল ইসলাম তাদের জন্য কী কী করেছেন সেই বর্ণনা দিয়েছেন। তারা যে বর্ণনা দেন তাতে প্রমাণিত হয় তরিকুল ইসলামের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক বড় বন্ধু তাদের নেই।
১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তরিকুল ইসলাম নাম লেখান জনপ্রতিনিধির খাতায়। ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত ও ১৯৮১ সালে সড়ক ও রেলপথ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেও ভোটের রাজনীতিতে তাঁর ছিল মিশ্র অভিজ্ঞতা। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরের বছর হন পূর্ণমন্ত্রী। ১৯৯৪ সালে দায়িত্ব পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পর্যায়ক্রমে খাদ্য, তথ্য ও সর্বশেষ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সবসময় তার জীবনযাত্রা ছিল খুবই সাধারণ। আঙুল ফুলে কলাগাছ হননি তিনি। আগাগোড়াই গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন নেতা। নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা যেমন, জাতীয় রাজনীতিতেও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। সার্বিকভাবে জনবান্ধব, সজ্জন ও মার্জিত চরিত্রের একজন রাজনীতিক তিনি।
মা-মাটি-মানুষের সাথে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। যশোরে উন্নয়নের মাইল ফলক সৃষ্টি করেন তিনি। বিএনপি সরকারের আমলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর মেডিকেল কলেজ, যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভাগীয় কাস্টমস অফিস, বেনাপোল স্থল বন্দর, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যশোর মডেল পৌরসভা, আঞ্চলিক পাঠাগার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনে। যশোরের শিক্ষা, সামাজিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সভাপতি ও উপদেষ্টা হিসেবে দশকের পর দশক দায়িত্ব পালন করেছেন। যার কারণে যশোরের মানুষ তাঁকে আধুনিক যশোরের রূপকার, যশোর উন্নয়নের কারিগরের স্বীকৃতি দেন। পারিবারিক জীবনে তরিকুল ইসলাম ছিলেন দুই ছেলের জনক। তার সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম যশোর সরকারি সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে যান। নার্গিস বেগম অবসরের যাওয়ার পর দৈনিক লোকসমাজের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে যশোর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নার্গিস বেগম চারদশক ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিলেন। বর্তমানে নেতারা তাঁকে দিয়েছেন জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব। তরিকুল ইসলামের বড় ছেলে শান্তনু ইসলাম সুমিত ব্যবসা করেন। বর্তমানে লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক। ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত রাজনীতিক। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত অমিত বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। যশোর-৩ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যশোরের মানুষের। মধ্যরাতের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়।
আধুনিক যশোরের রূপকার জননেতা তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রসঙ্গত, বার্ধক্যের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি আক্রান্ত হন ফুসফুসের ক্যান্সারে। এমনিতর এক পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর এই দিনে সকলকে কাঁদিয়ে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। তিনি যে কতবড় মহীরূহ ছিলের তার প্রমাণ মেলে তাঁর মৃত্যুর পর। লাখো মানুষের ঢল নামে তাঁর বাড়িসহ শহর জুড়ে। তাঁর নামাজে জানাজায় লাখ লাখ মানুষ আছড়ে পড়েন যশোর ঈদগাহ ময়দানসহ শহর জুড়ে। শেষ জীবনে অসুস্থ শরীরে নীরবে-নিভৃতে দিন কাটানো বিএনপির অত্যন্ত প্রভাবশালী এ নেতা শেষ গন্তব্যে যাওয়ার সময়ও জানান দিয়ে গেলেন মাটি-মানুষের সাথে তাঁর সখ্যের গভীরতা। যশোরের ইতিহাসে এতো বড় জানাজা কেউ কখনও দেখেননি।
তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাণী দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক বাণীতে তিনি বলেন, দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল ছাত্র-রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে মেহনতি মানুষের পক্ষের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা। ‘৭১ এ দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন অমিত বিক্রমে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে বিএনপিতে সম্পৃক্ত হয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও তিনি নীতি ও আদর্শ থেকে কখনোই বিচ্যুৎ হননি। দেশ ও দলের স্বার্থে নিষ্ঠাসহকারে দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক।
তারেক রহমান বলেন, যখনই গণতন্ত্র বিপদাপন্ন হয়েছে তখনই স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে মরহুম তরিকুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। দেশবাসী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি চিরদিন তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তাঁর মৃত্যু জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি এবং অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। মরহুম তরিকুল ইসলামের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”
অপর বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মরহুম তরিকুল ইসলাম ছিলেন গণমানুষের রাজনীতির সাথে আজীবন যুক্ত। পরবর্তিতে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানীর অনুসারী হিসেবে ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত তিনি সবসময় ছিলেন জনগণের পক্ষে। দেশ ও দশের প্রতি সহমর্মী এই মানুষটি সবসময় নিজ আদর্শে ছিলেন অবিচল। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কল্যাণে গণমানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ এবং গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমূখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছিল মরহুম তরিকুল ইসলামের রাজনীতির মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন আজীবন। আজীবন সংগ্রামী এই নেতা নিষ্ঠুর নির্যাতন সহ্য করেও কঠিন সিদ্ধান্তে অটুট থাকতেন। তাঁর রাজনীতি দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মরহুম তরিকুল ইসলাম এর অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশমাতৃকার মুক্তিতে তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য জাতি তাঁকে চিরদিন কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করবে। তাঁর কর্মময় জীবনের সাফল্যের মূলে ছিল আদর্শনিষ্ঠ উদ্যম ও উদ্যোগ। জনঘনিষ্ঠ ও কর্মীবান্ধব রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণেই তিনি জনগণ ও দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিকট ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। মরহুম তরিকুল ইসলামের রাজনীতির মধ্যে নিহিত ছিল সমাজ উন্নয়নের মূল শক্তি। বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমাজকল্যানমূলক কাজকেই তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জনাব তরিকুল ইসলামের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গভীর শুণ্যতা। আমরা একজন সত্যিকারের অভিভাবককে হারিয়েছি।