বিদেশী নিয়োগে আইন মানা হচ্ছে না

0

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক নিবন্ধে লিখেছে, বাংলাদেশে অশিক্ষিত বেকার তো আছেই, শিক্ষিত বেকারেরও কোনো অভাব নেই। দেশে কর্মসংস্থান না থাকায় অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রতিবছর ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত বাংলাদেশি মারা যায়। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের গণকবর পাওয়া যায়। পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মরুভূমিতে ধুঁকে ধুঁকে অনেকের মৃত্যু হয়। অথচ, দেশে বিদেশি কর্মীর ছড়াছড়ি। কর্মসংস্থান নিয়ে গবেষণা করেন এমন কারো কারো মতে, এই সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি এবং এদের ৯০ শতাংশের বেশি অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করছে। তারা কোনো আয়করও পরিশোধ করছে না। কারিগরি পেশায় তো বটেই; সাধারণ হিসাবরক্ষণেও অনেকে বিদেশিদের নিয়োগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদেশি নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে তৈরি পোশাক খাত। অভিযোগ আছে, অনেকের বেতন পরিশোধ করা হয় যেসব দেশের কর্মী সেসব দেশে বিশেষ ব্যবস্থায়। যাদের বেতন দেশে পরিশোধ করা হয়, তাদেরও প্রায় সবাই হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠায়। বছরের পর বছর এসব অনিয়ম চলে এলেও এর বিরুদ্ধে বাস্তবে প্রায় কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশে কত সংখ্যক বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছে, কতসংখ্যক বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া কাজ করছে, কারা কী কাজ করছে এসবের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। এর আগে ভারতের অনেক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি সন্ত্রাসীও বাংলাদেশে ধরা পড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর রেমিট্যান্স হিসেবে বিদেশে চলে যায়। অর্থাৎ আমাদের কষ্টার্জিত মোট রেমিট্যান্সের এক-পঞ্চমাংশই আবার বাইরে চলে যায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায়ও উঠে এসেছে, অবৈধভাবে কাজ করা বিদেশি কর্মীরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে অনুমতিপত্র ছাড়াই কাজে লেগে যায়। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা এখানে থেকে যায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে অবৈধভাবে যেসব বিদেশি কাজ করছে, তাদের অর্ধেকেরও বেশি ভারতের। এরপর রয়েছে চীন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।
আমরা জানি, শিল্প কারখানার অনেক টেকনিক্যাল কাজে বাংলাদেশি তরুণরা এখনো কিছুটা পিছিয়ে আছে। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের যদি বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতেই হয়, তাহলে তা করতে হবে বৈধভাবে। সরকারকে সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। অন্যদিকে সেই সব পেশায় দ্রুত বাংলাদেশি তরুণদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই বিদেশি কর্মীদের অবৈধ নিয়োগ মেনে নেওয়া যাবে না। অবৈধভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করবো, জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য বিবেচনায় সরকার সকল শিল্প কারখানাকে আইন মানতে বাধ্য করবে।