প্রসঙ্গ কোরবানির হাট

0

প্রতি বছর ঈদুল আজহায় বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি করা হয়। এখন কোরবানির জন্য দেশেই পর্যাপ্ত গবাদিপশু উৎপন্ন হচ্ছে। এমনকি কিছু পশু উদ্বৃত্তও থেকে যাচ্ছে। তবে বিপণনের দুর্বলতার কারণে প্রতি বছরই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবছর এমন সময় ঈদুল আজহা আসছে যখন করোনা মহামারী নিয়ে জাতি বড় শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। আরো তিন সপ্তাহ পর কোরবানির ঈদ। কিন্তু গবাদিপশু ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর কাজ কয়েক দিন পরেই শুরু হয়ে যাবে। একই সময় কঠোর লকডাউন চলায় কোরবানির পশুর চলাচল ও বেচাকেনা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কোরবানির জন্য এবার দেশে এক কোটি ১৯ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। খামারি ও বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তা মিলে গরু ছাগল ভেড়া ও উটের এ বিশাল উৎপাদন এবার হয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। এসবের সাথে কোরবানির বাজারে নতুন ট্রেন্ড হিসেবে প্রতি বছর বাড়তি হারে যোগ হচ্ছে উট ও দুম্বা। এ বছরও সাড়ে চার হাজারেরও বেশি উট ও দুম্বা বাজারে আসছে। কোরবানির পশু বিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সাথে এত বিপুল পশুর কোরবানি আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। কেবল কোরবানিতে পশু বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে দেশে অসংখ্য খামার ও ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য গরুর খামার। এ অবস্থায় টেকসই বাজারব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় কখনো ক্রেতা কখনো বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেমন গত বছর কোরবানির বাজারের শুরুর দিকে গবাদিপশুর চাহিদা দেখা যায়নি। অনেকে তখন কমদামে পশু বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজার অবস্থা বেগতিক দেখে অনেকে খামার থেকে তাদের পশু বের করেননি। কিন্তু কোরবানির একেবারে শেষ মুহূর্তে বাজারে পশুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা গেল। ফলে অনেকে দ্বিগুণ দামে পশু কিনতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে গরু মহিষের বদলে ছাগল ভেড়া কিনেছেন। অনেকে কিনতেই পারেননি। অথচ কোরবানির উপযুক্ত ২৩ লাখের মতো পশু অবিক্রীত থেকে যায়।
গত বছর করোনার পাশাপাশি বাজারে বন্যার প্রভাব পড়ে। এবারো করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, গবাদিপশু বাজারজাতকরণ সহজ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এবার সারা দেশে সব মিলিয়ে কোরবানির পশুর প্রায় আড়াই হাজার হাট বসবে। পশুর হাটে ভিড় কমানোর জন্য সরকার উন্মুক্ত স্থানে হাট বসাতে উৎসাহিত করছে। কোরবানির পশুচিকিৎসায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সারা দেশের পশুর হাটে এক হাজার ২০০ পশু চিকিৎসক দল নিয়োগ করা হবে।
পশুর বাজার নিয়ে চাঁদাবাজি একটি বড় সমস্যা। এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে। আবার পশু পরিবহনে বিপুল চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটে। এ ক্ষেত্রে দলীয় লোকদের সাথে কিছু পুলিশও যোগ দেয়। সরকারকে চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গবাদিপশু উৎপাদন অনেক বেড়েছে। খামারিদের লক্ষ্য থাকে উপযুক্ত দাম পাওয়া। কোনোভাবে যদি সেটা ভেস্তে যায় তাহলে তার সারা বছরের শ্রম ও পুঁজি দুটোই পণ্ড হয়। ফলে সে পুনরায় খামারে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হয়। সাধারণত হঠাৎ করে ঠিক কোরবানির কয়েক দিন আগে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে করে দেশের কোরবানির পশুর দাম কমে যায়। এমন অবস্থা থেকে সরকারি উদ্যোগ খামারিদের বাঁচাতে পারে। সরকার বলছে, এবার সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ভারতীয় পশু ঢুকতে পারবে না। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অনলাইন কেনাবেচাও নির্বিঘœ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সরকারকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। যাতে করে ক্রেতা বিক্রেতা এবং আমাদের পশুকেন্দ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।