বৈপরিত্:যুবদলকে কোনঠাসা রাস্তা জুড়ে যুবলীগ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যুবলীগ সমাবেশ করছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাস্তা জুড়ে। অপরদিকে যুবদলের সমাবেশকে বাধা দিতে চতুর্দিকে পুলিশের ব্যারিকেড। এমন বৈপরিত্য দেখলেন গতকাল যশোর শহরবাসী। সেই সাথে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতেও হল তাদের।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা জানান, ২৭ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা যুবদল বিএনপি কার্যালয়ে অপরাহ্ন ৩ টায় যুব সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশকে ঘিরে মঙ্গলবার রাতভর পুলিশ নগর যুবদলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বাড়িতে অভিযান চালায়। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যোগদান ঠেকাতে ব্যাপক ভীতি সৃষ্টি করে। রাতের এই মিশনের পর পুলিশ বুধবার (গতকাল) সকাল থেকে আবারও মাঠে নামে। জেলা বিএনপি কার্যালয়ের পাঁচটি প্রবেশ পথ ও শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে ব্যারিকেড দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যোগদান ঠেকাতে সড়কের ওপর ব্যারিকেড দেয়। অনেক স্থানে সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে আসা নেতা-কর্মীদের নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়িতে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে ভীতি সঞ্চার করা হয়।


দলীয় নেতৃবৃন্দ জানান, পুলিশের বিশেষ শাখার অনুমতি নেয়ার পরও বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সমাবেশস্থলে আসেন। তিনি উপস্থিত যুবদল নেতা-কর্মীদের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্মসূচি পালনের কথা বলে চলে যান। পরক্ষণে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম এসে সমাবেশ না করার জন্যে নেতা-কর্মীদের হুশিয়ার করেন। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অনুমতির কথা বললে তিনি বলেন, ওটা দেখার সময় নেই। জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। একথা বলে তিনি সমাবেশের মঞ্চ, চেয়ার, মাইক অপসারণ করান। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন প্রকার সমাবেশ, কিংবা মিছিল করার চেষ্টা করলে ‘হাত-পা ভেঙে’ দেয়া হবে। একথা বলে তিনি চলে যান। এদিকে, জেলা বিএনপির কার্যালয় এলাকা লালদিঘির পূর্বপাড়ের দুটি প্রবেশ পথ, পশ্চিমপাড়ের তিনটি প্রবেশ পথে লোহার ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। সেখানে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন অবস্থা সৃষ্টি করে জনসাধারণের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশের প্রতিবন্ধকতার কারণে লালদিঘির পাড়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পথচারীদের ওই পথে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।


পুলিশ লালদিঘির পাড়ের সকল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মধ্যেও অবস্থান নেয়। সমাবেশে যোগদানের সময় প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে বাধা দেয়া হয়। একই সাথে সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত গণমাধ্যম কর্মীদেরও বাধা দেয় পুলিশ। এছাড়া শহরের প্রবেশমুখে খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, চাঁচড়া মোড়, পালবাড়ী মোড়, রাজারহাট মোড়সহ সবকটি প্রবেশপথ বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীদের ঠেকাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। শহরের জেল রোড কাঠেরপুল, মনিহার, ধর্মতলা মোড়, চারখাম্বার মোড়, ফায়ার সার্ভিস অফিসের মোড়সহ বিভিন্ন মোড় ও সড়কে পুলিশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে কারণে সমগ্র শহর জুড়ে জনসাধারণের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হয়। আবার ইজিবাইক থেকে যুবদল নেতা-কর্মী ভেবে সাধারণ মানুষদেরও নামিয়ে দেয়।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সাতক্ষীরা নাভারণ মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। আবার শার্শা থানার মোড় এলাকায় সমাবেশে যোগদানের গাড়ি আটকে চালককে আটকের ভয়ভীতি দেখানো হয়। গাড়ি থেকে দলের নেতা-কর্মীদের নামিয়ে আটকের হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি দলের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন।
আবার মনিরামপুর, কেশবপুর, সদর উপজেলার একাংশ এবং অভয়নগর উপজেলার নেতা-কর্মীদের যোগদান ঠেকাতে রাজারহাট মোড়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। পুলেরহাট, রাজগঞ্জ সড়কের ভান্ডারি মোড় নামক স্থানেও পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকে নেতা-কর্মীদের নামিয়ে দেয়। পুলিশের এমন বাধা ব্যারিকেড গ্রেফতার, আতঙ্ক উপেক্ষা করে যুবদল নেতা-কর্মীরা বেশ উৎফুল্ল ছিল। তারা দলীয় কার্যালয়ের আশপাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ সফল করে সীমিত পরিসরে হলেও প্রধান অতিথি অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে নিয়ে সমাবেশ করে। উপস্থিতি পুলিশি বাধার কারণে আশানুরূপ না হলেও যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে বেশ উদ্দিপ্ত দেখা যায়। যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, দেশ অনেক আগেই আওয়ামী ও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, দড়াটানার মোড়ে যুবলীগের সম্প্রীতি সামবেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বিঘেœ মিছিল সহকারে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। এসময় পুলিশকে দেখা যায় ব্যারিকেড সরিয়ে তাদের ওই সমাবেশে যোগদানের পথকে সুগম করে দিতে। দড়াটানার ভৈরব চত্বরের ওই সমাবেশের উপস্থিতি ছিল রাস্তা জুড়েও। এ কারণে স্বাভাবিক চলাচল বিঘœ হয় সাধারণ মানুষের। পুলিশের এমন ভূমিকার বিষয়ে যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।