বৃটেনে বাংলাদেশি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত হতে পারে

0

মিজানুর রহমান॥ বাংলাদেশিদের বৃটেন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সহসাই প্রত্যাহার হওয়ার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। ছয় হাজারের বেশি বাংলাদেশি লন্ডনে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। তারা প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছেন, নানাভাবে ঢাকা ও লন্ডনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। কিন্তু বরফ গলছে না। উদ্ভূত চাপ বিবেচনায় একদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর অনুরোধ জানান। কাল লন্ডনে দেশটির পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি ও হেড অব ডিপ্লোমেটিক সার্ভিস ফিলিপ বার্টনের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠকের এজেন্ডায়ও নিধেষাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে আজ রওনা হতে যাওয়া ঢাকার প্রতিনিধিরা। কিন্তু আদতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কতোটা বরফ গলবে? তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
কর্মকর্তাদের মতে, করোনা সংক্রমণের হার কমে আসা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বৃটেনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা ‘রেড-লিস্ট’ থেকে বাংলাদেশের নাম মুছে দিতে খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব যে জবাব দিয়েছেন তাতে এটি প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাই স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত: মন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি অনেকটা কূটনৈতিক জবাব দিয়েছেন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন- ‘বৃটেনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবেন।’ দ্বিতীয়ত: লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেলেও ব্রিটিশ সরকার প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটাই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে মোমেন-রাব আলোচনা হয়েছে কি-না? তার কোনো উল্লেখই ছিল না বৃটেনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এটাও অস্পষ্টতা বা প্রলম্বিত হওয়ার ইঙ্গিত। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবকে উদ্ধৃত করে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় মন্ত্রী রাব বলেছেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাদের দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এবং বাংলাদেশের জিনোম সিকোয়েন্সিং ডেটার আরও ঘনঘন প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ সরকার রেড-লিস্টে বাংলাদেশকে রাখা না রাখার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।’ ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে মন্ত্রী ‘সাইন্টিফিক ডেটা’ এবং করোনা ভ্যারিয়েন্টের ‘জিনোম সিকোয়েন্স’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে বিদ্যমান করোনার ধরন বা ভ্যারিয়েন্টের ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ পর্যালোচনা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত নিয়িমতভাবে আপডেট করতে হবে, যা বৃটেনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মনিটর করবেন। বাংলাদেশ থেকে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকির মাত্রা কমে আসার বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ পেলেই কেবলমাত্র তারা এটি প্রত্যাহার করবেন। ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির বিষয়টি রাজনীতির ঊর্ধ্বে। বৃটেন যে তালিকা করেছে তাতে বিভিন্ন দেশ রয়েছে। যে যার মতো করে সাইন্টিফিক ডাটা সরবরাহ করে নিজেদের নাম তালিকা থেকে রিমুভ করার চেষ্টায় রয়েছে। একটি দেশ ডেটা সরবরাহ করলেই বৃটেনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তা মেনে নেন না। তারা নিজস্ব মেকানিজমেও ডেটা কালেক্ট করেন। দু’টো মিলিয়েই স্পর্শকাতর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সুতরাং রেড বা গ্রীন লিস্টে থাকা বাংলাদেশ কিংবা অন্য রাষ্ট্রের মুখ্য বিবেচ্য হবে ডেটা। ঢাকাকে সেই ডেটা অর্থাৎ করোনার ছড়ানোর ঝুঁকি কমা সংক্রান্ত সাইন্টিফিক তথ্য দিয়েই ওই তালিকা থেকে নাম মুছতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। উদাহরণ দিয়ে এক কূটনীতিক বলেন, রাজনীতিবিদরা নানা কথাই বলেন। এ অধিকার তাদের জন্য সংরক্ষিত। এসব বক্তৃতায় রাজনৈতিক বিবেচনা মুখ্য। কিন্তু বাস্তবতা কি? বৃটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। কিন্তু তিনি কি পাকিস্তানকে রেড লিস্ট থেকে রিমুভ করতে পেরেছেন। নাকি ভারতকে ওই তালিকা থেকে রিমুভ হওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন? নিশ্চিয়ই না। মনে রাখতে হবে তিনি ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী। তার সরকারের স্বার্থ রক্ষায় তিনি শপথ নিয়েছেন। কোথায় জন্মেছেন বা কার সঙ্গে তার জন্মমাটির সখ্য কিংবা বিরোধ রয়েছে সেটি তার বিবেচ্য নয়। তবে হ্যাঁ, মানুষ হিসেবে তার পৈতৃক ভিটা বা জন্মমাটির প্রতি টান থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই তিনি ইউনিভার্সেল ডিসিশনটাই নিবেন বা নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশকে রেড-লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করে বৃটেন, সোমবার পর্যন্ত ওই তালিকায় ছিল ৬২ দেশ। রেড-লিস্টভুক্ত দেশের নাগরিকদের বাইরে থেকে ঢুকতে দিচ্ছে না দেশটি। এসব দেশ থেকে বৃটিশ নাগরিকরা ঢুকতে পারলেও থাকতে হচ্ছে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিনে।