বন্যারোধে নদী খনন বাড়াতে হবে

0

দেশে ভারি বৃষ্টিপাত না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মা ও যমুনা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমার যথেষ্ট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। চর ও নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল বলেছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরো কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। বন্যা এখনো প্রবল না হলেও নদীভাঙন ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের ভাঙনে এরই মধ্যে সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে যত ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তার মধ্যে শুধু বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বাকি সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মিলিত ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি। তাই দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। বলা বাহুল্য, বর্ষায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে তার ৯৫ শতাংশই আসে উজানে থাকা দেশগুলো থেকে। যখন নদীগুলোর গভীরতা ছিল তখন এই পানি নদী দিয়েই নেমে যেত। এখন নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় নদী এই পানি ধারণ করতে পারে না। তখন দুই পারের জনপদ, ফসলি জমি ভাসিয়ে নেয়। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার নদীগুলোর ভরাটপ্রক্রিয়াও দ্রুততর হয় উজানে নদীর প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানা কর্মকাণ্ডের কারণে। তা সত্ত্বেও ভাটির দেশ হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে নানা ধরনের উদ্যোগ আমাদের নিতেই হবে। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য নদীখনন হলো তার মধ্যে অন্যতম।
ব্রিটিশ আমলেও এ দেশে নিয়মিত নদী খনন করে নদীবন্দরগুলোকে সচল রাখা হতো। পাকিস্তান আমলে নদীখননের সেই প্রক্রিয়া কিছুটা কমে যায় এবং তখন থেকেই শুরু হয় নদীগুলো ভরাট হওয়া। স্বাধীনতার পর খাল ও চর দখল শুরু হলে দ্রুত ভরাট শুরু হয়। এরপর সব আমলে সীমিত পরিসরে নদীখনন শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির আর উন্নতি হয়নি। বর্তমানে বেশ কিছু ড্রেজার সংগ্রহ করে নিয়মিত নদীখনন চলছে। কিন্তু এখনো তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমরা জানি, যে পরিমাণ পলি নদীগুলোতে জমা হয় তার চেয়ে বেশি পলি অপসারণ করতে না পারলে নদীগুলো নাব্য হয় না। তাই কাজটি কঠিন হলেও নদীখননের প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। অন্যথায় ফি বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মরুকরণের শঙ্কায় থাকতে হবে। আমরা আশা করবো, সরকার দখল উচ্ছেদ ও নদী খনন কাজ বৃদ্ধি করবে।