দ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে

0

গত দুই সপ্তাহের পরিসংখ্যান আমাদের কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। এতে দেখা যায়, দেশে প্রতিদিন যতসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, সুস্থ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। কমছে আক্রান্তের হারও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে টিকার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে এখনো দুশ্চিন্তার বড় কারণ, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ১৯ দিন পর একদিন মৃত্যু দু’শোর নিচে নামার পর আবারও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে। এরপর মৃত্যু ও সনাক্ত আবারো কিছুটা কমেছে। এই ধারা ধরে রাখা প্রয়োজন। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা টিকা কর্মসূচি আরো দ্রুততর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে টিকার সংকট কাটছে না।
অর্থনীতি রক্ষা ও মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সরকার লকডাউন বা কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে। ১১ আগস্ট থেকে সব ধরনের গণপরিবহনের চলাচল শুরু হয়েছে। মার্কেট-শপিং মল-রেস্টুরেন্ট-দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। ১৯ আগস্ট থেকে খুলবে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে এবং দিন দিন তা আরো বাড়বে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় বাইরের মানুষ কম প্রবেশ করেছে, সেখানে সংক্রমণের বিস্তারও কম হয়েছে। এখন চলাচল বাড়বে, একই সঙ্গে সংক্রমণও বাড়বে এবং সেটি স্পষ্ট হবে আরো সপ্তাহ দুয়েক পর। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সম্ভাব্য সর্বাধিক মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা এবং গণপরিবহনসহ সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা। পর্যটন এলাকায় টিকা গ্রহিতা ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা গেলেও সংক্রমণ অনেক কমে যায়। তাই, এ ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে।
সারা পৃথিবীতেই টিকার সংকট চলছে। তা সত্ত্বেও দেশে কিছুদিন আগে টিকার যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। বুধবারও চীন থেকে সিনোফার্মের আরো ১৭ লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে চারটি ব্র্যান্ডের মোট টিকা এসেছে দুই কোটি ৯০ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ ডোজ। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ডোজের বেশি। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছে তিন কোটির বেশি মানুষ। দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। জনপ্রতি দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া হলে টিকা লাগবে ২৬ কোটিরও বেশি। সেদিক থেকে টিকা সংগ্রহে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। সরকার আশা করছে, এ মাসে আরো এক কোটি ডোজ টিকা আসতে পারে। আর এ বছরের মধ্যে আসতে পারে আরো ১০ কোটি ডোজ। সরকার টিকা সংগ্রহে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামী বছরের প্রথমার্ধেই আমরা প্রয়োজনীয় টিকা পেয়ে যাব। কিন্তু টিকাই একমাত্র সমাধান নয়। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তাই, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে।