রিয়াদকে দলে ফেরানোর প্রাথমিক সুফল অন্তত মিলল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আট ব্যাটসম্যান ফর্মুলায় মাঠে নামা নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের সবুজ ঘাসের সজীব পিচে দুজন মাত্র পেসার আর মেহেদি হাসান মিরাজসহ ৯ জন উইলোবাজের দল দেখে সবাই কমবেশি বিস্মিত! একঝাঁক ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নেমেও বিপর্যয়ে পড়া।
মাত্র ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অনিশ্চিত যাত্রা দেখে অতি বড় বাংলাদেশ ভক্তও হতাশ হয়েছিলেন। সবার একটাই প্রশ্ন ছিল, হারারের ঘাসযুক্ত পিচে যেখানে জিম্বাবুয়ে ৪ জন ফাস্ট বোলার নিয়ে দল সাজিয়েছে, সেখানে দুজন মাত্র পেসার ও মিরাজকে ধরে ৯ ব্যাটসম্যান খেলানো কেন?
প্রথম দিন শেষে অবশ্য সে সমালোচনা খানিক কমেছে। অতি বড় সমালোচকও মানছেন, খেলার ফল যাই হোক, বেশি ব্যাটসম্যান খেলানো বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাউকে না নিয়ে অভিজ্ঞ ও পরিণত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে খেলানোর প্রাথমিক সুফলটা পাওয়া গেল চটজলদি।
অনেকেই অবশ্য লিটন দাসের কথা বলবেন। তাকে নিয়েই হয়তো অনেক বেশি হইচই হচ্ছে। লিটন দাসের নান্দনিক ব্যাটিংয়ের বন্দনা চারিদিকে। হ্যাঁ! সত্য লিটন দাস হারারে টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের টপ স্কোরার। অধিনায়ক মুমিনুল হকের ৭০ রানের ইনিংস টপকে লিটন দাস করেছেন ৯৫ রান। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ইনিংস।
বিপর্যয়ের মুখে যতটা সাহস, আস্থা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা যায়, তাই খেলেছেন। মারার বল মেরেছেন। ভাল বলকে সমীহ করেছেন। তাড়াহুড়ো করে শট খেলার চেষ্টা ছিল না বললেই চলে। অনেক হাফভলি, ওভারপিচড ডেলিভারিও তেড়েফুঁড়ে না মেরে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স বা জেন্টল পুশ করেছেন। মিডল-লেগস্টাম্পের ওপর বল পেলে চকিতে কবজির মোচড়ে ফ্লিক খেলতে যাওয়ার সহজাত প্রবণতাটাও কম ছিল।
সব মিলে লিটন দাস চেষ্টা করেছেন সত্যিকার টেস্ট ইনিংস খেলতে। কিন্তু এমন পরিপাটি, সাজানো গোছানো ইনিংসটি পূর্ণতা পায়নি। পড়ন্ত বিকেলে গিয়ে আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলেন না লিটন। জিম্বাবুয়ান পেসার তিরিপানোর শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে ধরা পড়লেন ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। দিনের ঠিক মিনিট ১৭ আগে অমন শটই হলো কাল।
ঠিক আগের ওভারে তেমনই এক খাট লেন্থের ডেলিভারিতে সুন্দর পুল খেলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন। বল স্কয়ার লেগ দিয়ে চলে যায় সীমানার ওপারে। কিন্তু এবারের ডেলিভারিটি একটু ভেতরে এসেছে। সীমানার কাছে ছিলেন ফিল্ডার নিয়ুচি। পুল খেলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় ক্যাচ চলে যেতে পারে- সে চিন্তা ও বোধ কম ছিল।
ফলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হলো। তিরিপানোর বলে নিয়ুচির হাতে ক্যাচ দিয়ে শতরানের হাত মেলানো দূরত্ব থেকে সাজঘরে ফিরলেন লিটন। ১৪৭ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে শতরান থেকে মাত্র ৫ রান দূরে দাঁড়িয়ে আউট হলেন লিটন। টেস্টে এতদিন তার সর্বোচ্চ ছিল ২০১৮ সালের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ৯৪ রান।
টেস্ট ক্রিকেটে যেটা খুব বেশি হয়, একটি জুটি জমে যাওয়ার পর ভাঙলে বোলাররা আবার হারানো উদ্যম ফিরে পান। আর সেই উদ্যমে মিরাজকে প্রথম বলেই লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠালেন তিরিপানো। দিন শেষে তাসকিনকে নিয়ে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট দলে ফিরেই হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো রিয়াদ অপরাজিত ৫৪ রানে।
১০৯ রানে ইনিংসের অর্ধেক আর ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে লিটন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ প্রাণপণ চেষ্টা করে ১৩৮ রান জুড়ে স্কোরবোর্ডের নাকাল অবস্থা দূর করেন। লিটনের প্রায় নিশ্চিত শতরান হাতছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলেরও ক্ষতি হয়েছে।
মিরাজ উইকেটে এসে প্রথম বলেই বিদায় নিয়েছেন। মানে একটি নয়, দুটি উইকেট বেশি পড়েছে। তারপরও দিন শেষে মুমিনুল বাহিনীর স্কোর ৮ উইকেটে ২৯৪। দলীয় ১০৯ রানে ৫ উইকেট পতনের পর এ রানই যে অনেক। এখন দেখার বিষয় তাসকিন আর ইবাদতকে নিয়ে রিয়াদ আর কত দূর যাবেন?