যে কারণে ভেঙে যায় দিলীপ কুমার ও মধুবালার প্রেম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥একজন চলে গিয়েছিলেন সেই ১৯৬৯ সালে৷ মাত্র ৩৫ বছরেই থেমে গিয়েছিলো বলিউডের দুর্দান্ত সুন্দরী, গুণী অভিনেত্রী মধুবালার জীবন। তবু তিনি বারবার ফিরে এসেছেন ভক্তদের অপার্থিব অনুভবে৷
তিনি ফিরে এসেছেন দিলীপ কুমারের বাস্তব জীবনের অমর প্রেমের নায়িকা হিসেবে৷ আজ সেই দিলীপ কুমারও চলে গেলেন। চারদিকে আজ নায়ক হারানোর শোক৷ আজ তাকে নিয়ে হাজারো স্মৃতিচারণ।
স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় আসছে দিলীপ কুমারের জীবনের নানা ঘটনা। বাদ যাচ্ছে না তার প্রেমকাহিনীও। যেখানে মূল নায়িকা হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে মধুবালার নাম। সিনেমার পর্দা কিংবা বাস্তবে; বলিউডে একটা সময় তুমুল জনপ্রিয় ও আলোচনার বিষয় ছিলো দিলীপ কুমারের সঙ্গে মধুবালার জুটি।
তারা প্রেমে পড়েছিলেন৷ কেউ কেউ বলেন বিয়েও করেছিলেন। তবু কেন বিষাদ নেমে এসেছিলো তাদের জীবনে? কেন তারা একসঙ্গে কাটাতে পারেননি জীবন?
‘বলিউডের মেরিলিন মনরো’ মধুবালা ছিলেন অভিনেতা ও গায়ক কিশোর কুমারের স্ত্রী। কিন্তু মন প্রাণ উজার করে মধুবালা ভালোবেসেছিলেন একমাত্র দিলীপ কুমারকে। মুঘল-এ-আজমের সেলিমের প্রেমের সাগরে সত্যিই ডুব দিয়েছিলেন ‘আনারকলি’। তবে সেলিম-আনারকলির মতোই দিলীপ কুমার-মধুবালার প্রেমেও কাঙ্খিত পরিণতি পায়নি। মধুবালা চেয়েছিলেন দিলীপ কুমারকে বিয়ে করতে।
তা পারেননি। অনেকটা অভিমান ও দিলীপ কুমারের উপর ক্ষোভ নিয়েই পরে কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন মধুবালা। কিন্তু সুখী হননি। ৯ বছর টিকে ছিল এই তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক। রোগে শোকে ভুগে মারা যান কোটি পুরুষের স্বপ্নের রানী মধুবালা।
দিলীপ কুমার নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, আতাউল্লা (মধুবালার বাবা) এই সম্পর্কটাকে একটা বিজনেস ভেঞ্চার হিসাবে ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন যার জেরে সন্তুষ্ট হয়ে মধুবালার উপর থেকে মুখ ফিরেয়ে নেন তিনি। কারণ যাই হোক, এরপর কিশোর কুমারের সঙ্গে ঘর বাঁধেন মধুবালা।
১৯৬০ সালে মধুবালাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন কিশোর। ২৭ বছরের মধুবালা চটজলদি বিয়েও করে নিয়েছিলেন। যখন অসুস্থ মধুবালা চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি দিচ্ছিলেন। তার হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছিল বছর তিনেক আগেই। প্রায়শয়ই তার নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হত। তবে কাজ থেকে বিরতি নেননি মধুবালা। বিদেশে গিয়েও লাভ হয়নি, চিকিৎসকরা সাফ বলে দেন এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয় এবং খুব বেশি হলে মধুবালার হাতে ২ বছর সময় রয়েছে।
মধুবালার বোন ভারতীয় এক গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘মধুবালা পাগলের মতো ভালোবাসতেন দিলীপ কুমারকে। শুধুমাত্র দিলীপ কুমারকে উচিত শিক্ষা দিতে, তার প্রতি রাগবশত কিশোর কুমারের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘জেদ, রাগ আর ক্ষোভ- দিলীপ কুমারের প্রেমে পাগল আমার দিদি এই কারণেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিল’।
‘নয়া দৌড়’ সিনেমা নিয়ে আইনগত সমস্যার উদ্ভব হলে বাবা ও দিলীপ কুমারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। পরে তারা আদালতে গিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। এরপর দিলীপ কুমার দিদিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। দিদি বলেন যে আমি তোমাকে বিয়ে করবো কিন্তু প্রথমে তোমাকে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু দিলীপ তা মানতে রাজি হননি। সে এমনকি বলেছিলো যে দিলীপ বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরুক কিন্তু তাতেও রাজি হননি দিলীপ এবং তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।’
তাদের সম্পর্ক এতোটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে মুঘল ই আযম সিনেমায় অভিনয়ের সময় তারা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না।
দিলীপ কুমার এরপর সায়েরা বানুকে বিয়ে করেন।
পরে যখন মধুবালা অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তিনি দিলীপ কুমারকে বার্তা পাঠান যে তিনি তার সাথে দেখা করতে চান।দিলীপ যখন তার সাথে দেখা করতে গেলেন তখন অসুস্থতার কারণে মধুবালা খুবই শীর্ণ। সাধারণত মজার ও প্রাণবন্ত মধুবালা অনেক কষ্টে যে হাসি দিয়েছিলেন তাও খুব ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিলো।
মধুবালা তার চোখের দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘আমাদের প্রিন্স তার প্রিন্সেসকে (সায়রা বানু) পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’