চার মাসে ৫২ লাখ টন চিনির ক্রয়াদেশ পেয়েছে ভারত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ভারতের চিনি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। পাশাপাশি আগামী মৌসুমে পণ্যটির উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ মৌসুমে চিনি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৬০ লাখ টন। এর মধ্যে চার মাসেই ৫২ লাখ টন চিনি রফতানির চুক্তি করেছে ভারত। ৩৩ লাখ টন চিনি এরই মধ্যে রফতানি করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ রফতানির লক্ষ্যে বন্দর ছাড়ার অপেক্ষায় আছে। এদিকে স্বল্পসময়ে সর্বোচ্চ ক্রয়াদেশ পাওয়ায় এবার চিনি রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। খবর দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।
অল ইন্ডিয়া সুগার ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএসটিএ) প্রেসিডেন্ট প্রফুল ভাইথালানি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৫২ লাখ টন চিনি রফতানির চুক্তি করেছি। আমরা চলতি মৌসুমের নির্ধারিত ৬০ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার বেশি রফতানি করার প্রত্যাশা করছি।
কেন্দ্র সরকার চলতি মৌসুমে রফতানি সহায়তায় ৩ হাজার ৫০০ রুপি বাড়িয়ে দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির চিনি শিল্প খাত ৬০ লাখ টন চিনি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। প্রতি টন চিনি রফতানির ক্ষেত্রে ৬ হাজার রুপি করে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
গত বছর চিনিকলগুলো প্রতি টন চিনি রফতানিতে গড়ে ৯ হাজার ৭৫০ রুপি করে প্রণোদনা পেয়েছিল। ওই বছর কেন্দ্র সরকার রফতানি সহায়তা হিসেবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপি ব্যয় করে। এ সহায়তার মাধ্যমে রফতানিকারকরা গত বছর ৫৭ লাখ টন চিনি রফতানি করতে সক্ষম হয়। দেশীয় চিনির দাম বৈশ্বিক দামের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই রফতানিকারকদের জন্য প্রণোদনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। যেসব আখচাষী চিনিকলে আখ সরবরাহ করেন, তাদের বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রেও চিনিকলগুলোর প্রণোদনা সহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়। দেশটির চিনিকলগুলোয় চলতি মৌসুমে আখচাষীদের বকেয়া রয়েছে ২০ হাজার কোটি রুপি।
এমইআইআর কমোডিটিস ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহিল শেইখ বলেন, আমরা ৫২ লাখ টন চিনি রফতানির জন্য চুক্তি করেছি। এরই মধ্যে ৩৩ লাখ টন চিনি রফতানি করেছি।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্র সরকার থেকে প্রাপ্ত সহায়তার মাধ্যমে আমরা অবশ্যই আমাদের লক্ষ্যমাত্রার ৬০ লাখ টন চিনি রফতানি করতে পারব।
ইন্ডিয়ার সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএমএ) বলছে, চার মাসেরও কম সময়ে ভারতের রফতানিকারকরা এ পরিমাণ চিনি রফতানি চুক্তি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে কেন্দ্র সরকার চিনি রফতানিকারকদের জন্য রফতানি নীতি গ্রহণ করে। এ নীতির আওতায় সরকারের দেয়া প্রণোদনা রফতানি বৃদ্ধিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।আইএসএমএ আরো জানায়, ভারতের রফতানীকৃত ৪৮ শতাংশ চিনির গন্তব্য ইন্দোনেশিয়া ও আফগানিস্তান।
এমইআইআর কমোডিটিস ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহিল শেইখ বলেন, আমরা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও দুবাইয়ে অপরিশোধিত চিনি রফতানি করে থাকি। এছাড়া সাদা চিনি আফগানিস্তান ও শ্রীলংকায় রফতানি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গত বছর ভারতীয় চিনির সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইরান। দেশটি গত মৌসুমে ভারতের কাছ থেকে ১৪ লাখ টন চিনি ক্রয় করেছিল, যা রেকর্ড সংখ্যক। কিন্তু এ বছর বিভিন্ন জটিলতার কারণে দেশটিতে রফতানি কমিয়ে ক্ষুদ্র একটি অংশে নিয়ে এসেছে ভারত। চলতি বছর ভারতীয় চিনির সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইন্দোনেশিয়া।
চেন্নাইয়ের একটি বাণ্যিজিক সূত্রে জানা যায়, এ বছর চিনির চালান ভিয়েতনামেও যাচ্ছে। তবে ভিয়েতনাম অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণে ভারতের কাছ থেকে চিনি কিনছে বলে জানান রাহিল শেইখ।
এদিকে ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফসলের উৎপাদন কমতির মধ্যেই বেড়েছে চিনির দাম। চলতি সপ্তাহে গত সাত সপ্তাহের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে চিনির ভবিষ্যৎ মূল্য।
অন্যদিকে আগামী ২০২১-২২ মৌসুমে ভারতে চিনির উৎপাদন বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়ায় এবার দেশজুড়ে সব ধরনের চিনি উৎপাদন বাড়বে।