বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে রোজার আমেজ

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ গত কয়েক বছর ধরে বড় ব্যবসায়ীদের রোজার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিকে পূঁজি করে তারা রোজার অবশ্যম্ভাবী উপকরণের দাম আগেভাগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন। ক্রেতাদের অভিমত, রোজার মধ্যে সরকারি নজরদারি বাড়ানো এবং টিসিবির পণ্যের ভ্রাম্যমাণ বাজার শুরু হওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নিচ্ছেন। রোজার আর মাত্র একমাস বাকি। ইতোমধ্যে যশোরের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চড়া দামে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। মিলার, মজুতদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে আর কমাননি। টিসিবির পণ্য বাজারে না আসা পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান। পেঁয়াজ যথেষ্ট বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ও খামারের সোনালি মুরগির দাম আকাশছোঁয়া। বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। চিনি, খেজুর গুড় ও আখের গুড়ের দামও রোজার আগেই বেড়ে গেছে। সাধারণত রোজার মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি তৎপরতা বাড়ে। এ কারণে বড় ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েক বছর ধরে নতুন কৌশল হিসেবে রোজার দু মাস আগে থেকেই বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে অতি মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। এর ফলে বর্তমানে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই অস্বাভাবিক রকম বেশি।
যশোরের বড়বাজারে চালের দাম বাড়ার পর আর কমেনি। গতকাল রবিবার বাড়তি দামে বাজারে খুচরা পর্যায়ে মোটা স্বর্ণা চাল ৪৩ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ টাকা, বিআর-৪৯ চাল ৪৭ টাকা, মিনিকেট চাল মানভেদে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, কাটারিভোগ চাল ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা, বাসমতি চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন নতুন বোরো ধান উঠতে এখনও মাস দুয়েক সময় লাগবে। এর আগে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বিশ^বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বড় ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল বড়বাজারে খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, সুপার তেল ১২০ টাকা, পাম তেল ১১২ টাকা ও সরিষার তেল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা তেল ব্যবসায়ী রবি ব্যানার্জি জানান, রোজার মধ্যে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির আমদানি করা তেল ভ্রাম্যমাণ বাজারে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বড়বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জয়দেব দাস জানান, মাত্র তিন সপ্তাহ আগে বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছিল ২৫ টাকা। গতকাল বাজারে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বড়বাজার কালীবাড়ী এলাকার আড়তদার জমজম ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম হোসেন গতকাল জানান, যশোরের বাজারে বর্তমানে চৌগাছা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ‘সুখসাগর’ পেঁয়াজ বাজারে আসছে। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের ‘হালি’ পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমে যাবে। মাত্র একমাস আগে বড়বাজারে খামারের সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকা দরে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছিল ৩৬০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়। লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৯০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। তাছাড়া গরুর মাংসও এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। এদিকে, প্রতি কেজি চিনিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা। গুড়ের দামও বেড়েছে। খেজুরের গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ও আখের গুড় ৭০ টাকা। অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান মোটা মসুর ডাল ৭০ টাকা, দেশি চিকন দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। রোজার দু মাস আগে থেকেই সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে নেমে পড়ার প্রয়োজন অনুভব করছেন ক্রেতারা। গতকাল বড়বাজারে আসা ক্রেতা শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে রোজার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম কথিত স্থিতিশীল থাকছে। ওই সময়টা কোনো পণ্যের দাম আর বাড়ে না। এটা একটা বড় কৌশল বড় ব্যবসায়ীদের। প্রায় প্রতি বছরই রোজার দু মাস আগে তারা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিম্মি করে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে অতি মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। যা ইতোমধ্যে বাজারে পণ্যের দাম পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি আগামী বছর রোজার দু মাস আগে থেকে বাজার নজরদারির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।