বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে স্বর্ণের বিনিময়ে ঋণ চান গ্রাহক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥স্বর্ণের বন্ধকি ব্যবসায় ঋণ গ্রহীতার অভাব হয় না। দেশের বিভিন্ন জুয়েলারি ও মহাজনের কাছে প্রতিনিয়ত স্বর্ণের গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে স্বর্ণের কদর নেই। তাদের কাছে ঋণ নিতে গেলে জমি অথবা ফ্ল্যাট জামানত চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভালো চাকরির বেতন ‘অ্যাকাউন্টের’ বিপরীতেও ঋণ মেলে।
বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ভরি প্রতি ২৫ হাজার টাকা ঋণ দিচ্ছে। একজন গ্রহীতাকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা শতকরা বার্ষিক ১৮ শতাংশ সুদহারে ঋণ দেওয়া হয়। সাধারণ ক্রেতারা বাণিজ্যিক বাংকগুলোর স্বর্ণের বিনিময়ে ঋণ চালু করা উচিত মনে করেন। অনেকেরই শহরে জমি বা ফ্ল্যাট নেই। ভালো চাকরি করেন এমন মানুষের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। এ জন্য তাদের ভরসা সোনা বন্ধকির দোকান। সেখানে গয়না জমা রেখে উচ্চ সুদে ঋণ নেন তারা। যদিও সেই ব্যবসার কোনো আইনত বৈধ নেই। যার চাহিদা আছে তার আবার প্রথাগত জামানত দেওয়ার অবস্থা নেই। ফলে তারা যান বন্ধকি ব্যবসায়ীর কাছে, সেখানে সুদের হার ব্যাংকের থেকে দুই থেকে তিন গুণ। এ ব্যবসা এতটাই জমজমাট যে, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত উপজেলায়ও স্বর্ণ বন্ধকির দোকান আছে ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বর্ণ জমা রেখে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে। জামানত হিসেবে স্বর্ণ একটি ভালো উপকরণ। এ ক্ষেত্রে তারা ভারতের উদাহরণ দিয়েছেন। ভারতে স্বর্ণ বন্ধক রেখে যে কেউ ঋণ নিতে পারে। এমনকি স্বর্ণের বিপরীতে কম সুদে কৃষিঋণ দেওয়া হয়। এবিষয়ে, দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধনীদের বিনা জামানতেও ঋণ দেয়। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ ঋণ নিতে গেলেই জামানত হিসেবে চাওয়া হয় জমি বা ফ্ল্যাট। স্বর্ণ বন্ধক রেখে ঋণ চালু হলে অনেকে ব্যাংকিং ঋণের আওতায় আসবে। পরোক্ষভাবে এটি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে স্বর্ণের বিপরীতে ঋণ পাওয়া যায়। তবে তা নিয়ে তেমন কোনো প্রচার নেই। এ ঋণ দেয় সমবায় ব্যাংক। সেখানে এক ভরি খাঁটি সোনার বিপরীতে ২৫ হাজার টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সুদের হার ১৮ শতাংশ। এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল।
এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান বলেন, স্বর্ণ রেখে ঋণ দেওয়ার জন্য আমাদের নীতিমালা নেই। পাকিস্তান আমলে স্বর্ণের বিনিময়ে ঋণ দেওয়া হতো, এর ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ আমলেও ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে স্বর্ণ বন্ধকের ভেতরে ইমিটেশন পাওয়া যায়। তারপর থেকে ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এবিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, স্বর্ণের বিনিময় এলসি খুলতে পারবে। স্বর্ণ ঋণ সেনসেটিভ বিষয়। ঋণ দিতে হলে স্বর্ণকার লাগবে। কতোটুকু খাদ আছে জানতে হবে। তবে ৬০ এর দশকে আমলে স্বর্ণের বিনিময় ঋণ দেওয়া হতো। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, স্বর্ণ ঋণের পরিবর্তে আমরা পারসোনাল ঋণ দেই। যার লাগবে সে নিতে পারবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৯ সাল থেকে স্বর্ণের বিনিময় আমরা ঋণ দিয়ে যাচ্ছি। স্বর্ণের ভরি প্রতি ২৫ হাজার টাকা দিচ্ছি। সর্বোচ্চ একজন গ্রাহক ২ লাখ টাকা নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণ, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীকে স্যালারি ঋণ এবং ছোট ছোট প্রজেক্টে ঋণ দেই।
১৬০০ সাল থেকে পুরান ঢাকায় তাঁতীবাজারে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সোনা বন্ধক রেখে টাকা ধার দিতেন। তাদের বলা হতো ‘পোদ্দার’। এ শব্দটি থেকেই ‘পরের ধনে পোদ্দারি’ প্রবাদটির উদ্ভব হয়।