গ্যাসের দাম বাড়ানো ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিসিএমইএ বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। সংগঠনের নেতারা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা হবে ‘কাটা ঘায়ে নুনে’র ছিটা দেওয়া।
সোমবার (১৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিসিএমইএ সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন, উপদেষ্টা কুতুব উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিরামিক খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমদানি বিকল্প একটি খাত। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের চেষ্টায় রপ্তানি এবং আমদানি-বিকল্প পণ্য হিসেবে দেশে এরই মধ্যে ৭০টি সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই শিল্পে দেশি-বিদেশি মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া রপ্তানি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি হলে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটে। কিন্তু এই পরিস্থিতি কাটিয়ে না উঠতেই দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২১-২৪ মার্চ গণগুনানির দিন ঠিক করেছে।
এসময় বিসিএমইএ সভাপতি জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সিরামিক শিল্প সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হবে সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই শিল্প গ্যাস নির্ভর। ফলে বিকল্প কোনো জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই এতে। কিন্তু ক্রমাগত গ্যাসের দাম বাড়ায় বিপাকে রয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিগত ১০ বছরে শিল্পখাতে প্রায় ১০০ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিরামিক শিল্পে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস অন্যতম একটি উপকরণ গণ্য হয়। যার অংশ পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ১১-১২ শতাংশ। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় তৈরি পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না। ফলে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এসময় তিনি গ্যাসের দাম না বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে অনুরোধ জানান।
বিসিএমইএ’র সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত চার বছরে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১৫’শ কোটি টাকার অধিক মুনাফা করেছে। এরপরও লোকসানের দাবি তুলে অবিবেচকের মতো আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আদৌ যুক্তিসংগত বলে মনে করি না। অতীতে দাম বাড়ানোর সময় তিতাস কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- চাহিদা মাফিক উপযুক্ত মাত্রায় উন্নতমানের গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে প্রয়োজনীয় গ্যাসের প্রেসার ও মান ঠিক রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নতমানের গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা তিতাস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে কি পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বিসিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি এখন গ্যাসের কোনো দাম বাড়ানো উচিত হবে না। মহামারির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।