পরিকল্পনায় বদল, কেন কাটছে না অনীহা?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ টিকা নিতে ধীরগতিতে নিবন্ধন হচ্ছে। ফলে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচিতে নতুন পরিকল্পনা আনা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। এর আগে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপ্রচার এবং করোনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দায়িত্বশীলদের দেয়া তথ্য ও বক্তব্যে টিকা নিতে মানুষ উৎসাহ কম পাচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ ছাড়াও উপযুক্ত প্রচার-প্রচারণা না হওয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক তালিকা তৈরি হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮ দিনে ১ লাখ ৭৫ হাজারের কিছু বেশি মানুষ টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন বলে আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে। সুরক্ষা অ্যাপসটি এখনো চালু হয়নি। এদিকে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কতজন ভ্যাকসিন নেবেন, সেই সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কারণ, টিকাদান কর্মসূচির প্রথম মাসে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনে তেমন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় সরকার ৬০ লাখের পরিবর্তে ৩৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বছরব্যাপী যত ভ্যাকসিন পাবো, সবই দেশের মানুষকে দিতে থাকবো। এরই মধ্যে আনা ৭০ লাখ টিকা সব জেলায় পৌঁছে গেছে। টিকা নেয়ার জন্য এরইমধ্যে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। আগে নিবন্ধন একটু স্লো থাকলেও এখন তা বাড়ছে। আমরা অনুরোধ করবো, আপনারা করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে আমরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করবো। সরকারের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের টিকা দেয়ার জন্য মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ৭ই ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। রাজধানীতে ৪৩টি হাসপাতালে ৩৫৪টি বুথে টিকা কার্যক্রম চলবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ঠিক করে দিয়েছে। যারা কোর্টের লোকজন, তারা যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দিতে পারেন। আবার সচিবরা আছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আছেন সেটাও ভাগ করে দেয়া আছে। যাতে সুষ্ঠুভাবে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়, ভিড় না হয়। আমাদের কিছু মন্ত্রী, এমপিরা আছেন উনাদের আহ্বান করেছি যেন তারা যার যার এলাকায় টিকা নেন। এ ছাড়া তাদের জন্য গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল নির্ধারণ করেছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ যে টিকা পাবে, তার প্রথম চালান আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে পৌঁছাতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যাবে। সেটিও আমরা আশা করছি এপ্রিল-মে মাস থেকে কিছু কিছু পাবো। সারা বছরজুড়েই পাবো এবং দিতে থাকবো। কাজেই কখন কত টিকা দিলাম সেই হিসাব এখন দেয়া ঠিক হবে না। টিকা নিতে নিবন্ধনে ধীরগতি এবং অনীহা দূরীকরণে কী উদ্যোগ নিতে হবে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যারা দায়িত্বে আছেন এবং যারা টিকা নিবেন উভয়ই’র জন্য। প্রচার-প্রচারণা যথাপোযুক্ত হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা অপপ্রচারও ছিল। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক তালিকা তৈরি করে দেয়ায় ব্যক্তিরা নিজেরা নিবন্ধন করছেন না। প্রতিষ্ঠান তালিকা দেয়ার অর্থ হলো এটি যাচাই হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন হয়নি। নিবন্ধন ব্যক্তিকে নিজেই করতে হবে। কারণ তাকে কার্ড নিতে হবে এবং তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা যাবে, কোন্‌ তারিখে এবং কোথা থেকে টিকা নিবেন তিনি। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের পরিষ্কার করে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। অন্যদিকে, নিবন্ধন কম হওয়ার কারণে জনগণকে টিকাদানে উৎসাহিত করার জন্য সারা দেশে মাইকিং করা হচ্ছেও বলে জানা গেছে। এতে বলা হচ্ছে, করোনা নির্মূল করতে হলে টিকার কোনো বিকল্প নেই। আর টিকা পেতে হলে নিবন্ধন করতে হবে। প্রথম ধাপে বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টিকা পাচ্ছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি পরিচালিত কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ এ বছরের প্রথমার্ধে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ভ্যাকসিন পাবে। গত বুধবার কোভ্যাক্স’র প্রথম অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। কোভ্যাক্সের ২০২১ সালের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ পূর্বাভাস ও অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।