বছরের শুরুতে ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজারে মন্দা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত বছরের অধিকাংশ সময়ই ভোজ্যতেলের বাজার ছিল চাঙ্গা। তবে চলতি বছরের শুরুতেই মন্দায় পড়েছে ভোজ্যতেলের পাইকারি দাম। নতুন বছরের প্রথম দিনেই ভোজ্যতেলের দাম মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমেছে। মূলত বছর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দশকের মধ্যে দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয়েছে ভোজ্যতেল। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক দর বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) দাম সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পরবর্তী কয়েক বছরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক ও দেশীয় বাজারে দরপতন শুরু হয়। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়ে, যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রামের একাধিক শিল্প গ্রুপ। সর্বশেষ ডিসেম্বরের শেষ দিকে সয়াবিনের পাইকারি দাম মণপ্রতি ৪ হাজার ২৩০ থেকে ৪ হাজার ২৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তবে এ দামে লেনদেনের এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমে যায়।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বছরের প্রথম দিন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে লেনদেন কার্যত বন্ধ ছিল। তবে গতকাল লেনদেন শুরু হলে অধিকাংশ ভোজ্যতেলের দামই কমে যায়। ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ও পরিশোধিত মিলগেট থেকে সরাসরি সরবরাহযোগ্য ভোজ্যতেলের দাম মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমে লেনদেন হয়। যদিও ডিসেম্বরজুড়েই টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকা ভোজ্যতেলের হঠাৎ দরপতনে বাজারে বিক্রয়চাপ আরো বেড়ে গেছে। আগামীতে দাম আরো কমে যাওয়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দেশে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকে। বৈশ্বিক বুকিং দর বাড়তে থাকায় পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। দাম টানা বাড়তে থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ী ও বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়ায় ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে পাইকারিতে টানা মূল্যবৃদ্ধির কারণে মোড়কজাত ভোজ্যতেলের দামও অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেয় বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। তবে বছরের শুরুতেই কমতে থাকে পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দাম। এছাড়া সুপার পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ১০-২০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ৩ হাজার ৯৮০ টাকায়। একই সঙ্গে পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ৩ হাজার ৬৩০ টাকায়। শীত মৌসুমের কারণে জমে যাওয়ায় পাম অয়েলের পরিবর্তে সুপার পাম অয়েল ও সয়াবিনের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের বাজার শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনার ওপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় শ্রমিক সংকটে পাম অয়েল উত্তোলন কমে যায়। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না হওয়ায় এসব দেশ থেকে পাম অয়েল রফতানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়। তাছাড়া মধ্য আমেরিকার দেশগুলো থেকে সয়াবিন আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক সয়াবিনের বাজারও চড়া ছিল। এ কারণে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। নতুন বছরের শুরু থেকে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক কমানোর গুজবের কারণেও বাজারে পণ্যটির দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।