এক হাজার ৯৫৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমল ১৬৫ কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সম্প্রতি ‘হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় ১৫ খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ‘অপ্রয়োজনীয়’ এই খাতগুলো হচ্ছে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, নদী খনন ও সংরক্ষণ, ব্রিজ, পাম্প হাউজ, সেøাপ প্রতিরক্ষা কাজ, ড্রেন, ওয়ার্কওয়ে, ফেন্সিং, দুটি স্পিড বোট, সার্ভে গাড়ি, প্রজেক্টর, যন্ত্রপাতি, আইন বাবদ ব্যয়, সেমিনার ও কনফারেন্স, ম্যথমেথিক্যাল মডেল স্টাডি থেকে মোট ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণে সুপারিশ করা হয়েছে। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর চলতি বছর থেকে জুন ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খোয়াই নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ বা পুনর্বাসনের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা শহরসহ প্রায় ৪৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর এলাকা বন্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এছাড়া ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে খোয়াই নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামো ও সম্পদ রক্ষা সম্ভব হবে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তীরবর্তী এলাকাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা, ড্রেজিং ও পুনঃখনননের মাধ্যমে নাব্য তথা পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে খোয়াই নদীকে ঘিরে এমন বহুমুখী কর্মকা- পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কারণে খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৯ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৮ সেপ্টম্বর জারি করা ওই পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে সর্বসম্মতভাবে এই ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ২ দশমিক ৩১ কিলোমিটার পুরাতন খোয়াই নদী খনন ও সংরক্ষণ বাবদ ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে পাঁচটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২৪ কোটি টাকা, একটি পাম্প হাউজ নির্মাণে ১৮ কোটি টাকা, সাড়ে চার কিলোমিটার সেøাপ প্রতিরক্ষা কাজের জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে চার দশমিক ৬৩ কিলোমিটার ড্রেন, ওয়াক ওয়ে ও ফেন্সিং নির্মাণে সাড়ে ২৭ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। সেগুলোও বাদ দেওয়া হয়েছে। ৫০টি কমিউনিটি গ্রোথ সেন্টার ও রিক্রিয়েশন এরিয়া নির্মাণে ৩৯ কোটি টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। আরও যেসব প্রস্তাব বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলোÑদুটি স্পিড বোট কেনা বাবদ ৪০ লাখ টাকা, একটি সার্ভে ভেসেল বাবদ ২৮ কোটি টাকা, তিন সেট প্রজেক্টর ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ তিন লাখ টাকা। এছাড়া আইন বাবদ ২৪ লাখ টাকা, সেমিনার ও কনফারেন্স বাবদ পাঁচ লাখ টাকা। ম্যাথমেটিক্যাল মডেল স্টাডি বাবদ ৪ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ গিয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না, সেসব ক্ষেত্রে আমরা বাদ দিয়ে দেই। একান্ত অপরিহার্য না হলে অনেক ব্যয় প্রস্তাবই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ নানা কারণে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণে অনেক কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর অন্যতম হচ্ছে খোয়াই নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আথারামুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের পাশ দিয়ে হবিগঞ্জে প্রবেশ করেছে। হবিগঞ্জ জেলা শহরকে বন্যামুক্ত করতে করতে ১৯৭০-৭১ সাল থেকে ১৯৯২-৯৩ মেয়াদে খোয়াই নদী পদ্ধতি প্রকল্পের আওতায় নদীর দুই তীরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং অবশিষ্ট অংশে ডুবন্ত বাঁধ তৈরি করা হয়। বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন খোয়াই নদী খনন না করায় এর পানি ধারণক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। ফলে খোয়াই নদীর তীরবর্তি এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি সমতলের বিপৎসীমা অতিক্রম করে। নদীর দুই তীরে নির্মাণ করা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা শহর বিপৎসীমার প্রায় ১ থেকে ২ মিটার নিচে অবস্থিত। বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে নিয়মিত মেরামতের অভাবে বর্তমানে অধিকাংশ এলাকাই বাঁধ নকশা অনুযায়ী উচ্চতায় নেই। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। রেজা, জামান কোভিড-১৯ রোগীর কারণেই পুরো বিশ্বকে করোনা মহামারীর বিপর্যয় ভোগ করতে হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে চীনের প্রতি কঠোর হতে পারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তবে এ ধরনের বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা। করোনা মহামারী মোকাবেলায় সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তেদ্রোস আধানম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারা।