পুরুষ উদ্যোক্তাদের তুলনায় বেশি ব্যয় করতে হয় নারীদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥আমদানি ও রফতানিসংক্রান্ত সনদ সংগ্রহ ও নবায়নে পুরুষ উদ্যোক্তাদের তুলনায় নারী উদ্যোক্তাদের বেশি অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। ঋণপত্র (এলসি), নগদ সুবিধা ও জিএসপি সনদ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের এ বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে হয়। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘চ্যালেঞ্জেস অব ট্রেডিং অ্যাক্রস বর্ডারস ফেসিং দ্য উইমেন ট্রেডারস অব বাংলাদেশ: রিসেন্ট ফাইন্ডিংস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য ও নারীর সুনির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা খুঁজে বের করতে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। গতকাল গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তাই নিজে অথবা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করেন। নিজে বা কর্মীদের মাধ্যমে সনদ সংগ্রহে ব্যর্থ হলে তারা আইনজীবী বা পেশাদার প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেন। এক্ষেত্রে পুরুষ উদ্যোক্তারা সাধারণত দালালের শরণাপন্ন হন।
প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস অডিট, মডার্নাইজেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের সদস্য খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান। ডিএফআইডি বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার মাশফিক ইবনে আকবর এতে বক্তব্য রাখেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন আইএফসির প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট নুসরাত নাহিদ ববি।
প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে বিল্ডের সুপারিশগুলো হলো সনদপ্রাপ্ত এবং যোগত্যসম্পন্ন আইনজীবী ও পেশাদারদের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা ও এসএমইদের সেবা প্রদান, নারীদের জন্য এলসি খোলা ও নগদ সুবিধা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা, সক্ষমতা তৈরি, প্রচ্ছন্ন ব্যয় (হিডেন চার্জ) বন্ধ করা, লিড টাইম কমানো, সিজনাল ফিন্যান্সিং ত্বরান্বিত করা, নারী উদ্যোক্তাদের গ্যারান্টরের সংখ্যা কমানো এবং নারীদের জন্য সক্রিয় হেল্প ডেস্ক চালু করা।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক আচরণ, বন্ড লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করা, এইচএস কোড সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে নতুন এইচএস কোড চালু করা ও কাস্টম কর্মকর্তাদের জ্ঞানস্বল্পতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও অর্থনীতিতে নারীদের অবদান বেশি নয়, যা বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীদের অবদান প্রায় ৯২ শতাংশ। এ পরিপেক্ষিতে অর্থনীতিতে নারীর অবদান বাড়াতে হলে নারী শ্রমশক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে।
নুসরাত নাহিদ ববি বলেন, বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় বিশেষ হেল্প ডেস্ক থাকলেও সেগুলোতে হালনাগাদ তথ্য তেমন পাওয়া যায় না।
খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, যেসব জায়গায় নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ রয়েছে, আমাদের উচিত সেসব দিকে নজর দেয়া এবং তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেয়া। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো (এনএসডব্লিউ) চালু করলে এসব সমস্যা পুুরোপুরি দূর হবে। কেননা এর মাধ্যমে ৩৯টি বিভাগে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হবে। নারীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, ই-পেমেন্ট চালু হলে এগুলো দূর হয়ে যাবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ই-পেমেন্টে আগ্রহী হলেও ছোটখাটো আমদানিকারকরা ই-পেমেন্টে যেতে চাইছেন না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান বলেন, আরজেএসসি বর্তমানে সম্পূর্ণ অটোমেশনে চলে গেছে। ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে মালপত্র গন্তব্যে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতিটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে নারীদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অথরাইজেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য সচিবালয়ে ঢোকার মুখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিসিআইঅ্যান্ডই কার্যালয়ের চিফ কন্ট্রোলার প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর বলেন, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ করেছি। ম্যানুয়ালে যেখানে সনদ পেতে তিনদিন লাগত, এখন সেখানে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই সনদ দেয়া হচ্ছে। নবায়নের ক্ষেত্রে সময় আরো কম লাগছে। এছাড়া সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো বাদ দেয়া হয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বন্দর) আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নারীরা বন্দরগুলোতে কী কী বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলো আমরা সমাধানের যথাযথ চেষ্টা করব।
এনবিআরের কমিশনার হোসেন আহমেদ বলেন, বিএসটিআইয়ের ল্যাব উদ্যোক্তাদের পরিপূর্ণ সমাধান দিতে পারে না। ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এসব পরীক্ষায় একেক ল্যাবরেটরিতে একেক রকম ফলাফল পাওয়া যায়।