ইসলাম হত্যার বিধান দেয়নি

0

গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা ও লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার যে লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা স্তম্ভিত ও হতবাক। মানুষ যে এত নিষ্ঠুর ও নৃশংস হতে পারে, তা ধারণাও করা যায় না। যা অসম্ভবপর ও কল্পনাতীত, শত শত মানুষের সামনে তাই সংঘটিত হয়েছে। রংপুর শহরের বাসিন্দা দুই সন্তানের জনক শহীদুন্নবী জুয়েল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। বছরখানেক আগে ঠুনকো অভিযোগে তার চাকরি চলে যায়। সেই থেকে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। যথারীতি চিকিৎসাও চলছিল। ওইদিন তার এক বন্ধুর সাথে তিনি বুড়িমারী গিয়েছিলেন, তার বোনের ভাষায়, মানসিক অসুখের ভারতীয় ওষুধ কিনতে। ফেরার পথে আসরের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বুড়িমারী বাজার জামে মসজিদে। সেখানেই পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে স্ববন্ধু প্রহৃত হন তিনি। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও হামলা হয়। হামলকারীরা মারতে মারতে শহীদুন্নবী জুয়েলকে মেরেই ফেলে। পুলিশ তার বন্ধুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে শহীদুন্নবী জুয়েলের লাশ রাস্তায় ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরূপ মধ্যযুগীয় বর্বরতায় দেশের মানুষ একদিকে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত, অন্যদিকে ুব্ধ-বিুব্ধ। মানুষের জীবন যে কতটা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ, এ ঘটনায় তা বিশেষভাবে প্রত্য করা গেছে। যে কোনো সময় যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে কিংবা গুজব রটিয়ে এ ধরনের ঘটনার জন্ম দিতে পারে। আসলে কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে এখনো পরিষ্কার হয়নি। কারা অভিযোগ আনলো, গুজব রটালো এবং হত্যা করলো তা অনুপুংখ তদন্তের দাবি রাখে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে শীর্ষ স্থানীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে বলা হয়েছে, মসজিদের খাদেম, ডেকোরেটরের মালিক, ইউপি মেম্বারসহ কতিপয় অজ্ঞাত ব্যক্তি এঘটনার দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এইসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিও দায়মুক্ত থাকতে পারবেন না। তারা দায়িত্ব পালনে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। শুরু থেকেই পুলিশ ও প্রশাসন যদি সক্রিয় হতো, গুজবতাড়িত লোকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো এবং ডিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে এমন মর্মন্তুদ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারতো না। ইতোমধ্যে মানবাধিকার কমিশন ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তিনটি পৃথক মামলাও হয়েছে। আশা করা যায়, উপযুক্ত তদন্তে, ঘটনার কারণ, কারা দায়ী, কারা ইন্ধনদাতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা কোথায়, কতটুকু তা জানা সম্ভব হবে। অবশ্য এটা জানাই যথেষ্ট নয়। এরূপ ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত তদন্ত, বিচার ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হলেই মানুষ খুশি হবে। আমরা মুসলমান ভাইদের বলবো, যা ঘটেছে তা ইসলাম বা ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলাম এভাবে মানুষ হত্যার কোন বিধান দেয়নি। নবী রসুলের (স.) নামে হত্যা করবেন না।