বর্বরদের নির্মূলের দায়িত্ব সরকারের

0

এ কেমন বর্বরতা ? প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেই এই প্রশ্ন আসছে সবার মাঝে। আৎকে ওঠার পর একই আওয়াজ এ কোন অবস্থা যে এক থেকে শত কোনো বয়সই রক্ষা পাচ্ছে না ? হঠাৎ কেন এমন ভয়াবহ অবস্থা ? ধর্ষণ, বলৎকার সবই হচ্ছে এবং তা ভিডিও করে ভাইরাল করছে। ধর্ষকরা এতো সাহস পাচ্ছে কোথায় ? লীগ পরিচয় যদি সাহস হয় তাহলে তা ভাঙ্গতে হবে সরকারকেই এবং এখনই তা করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তের প্রধান খবর হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীরা প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিলেটের এমসি কলেজে নববধূকে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটেনি। এরই মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনাটি সামনে এসে গেল। আমাদের এই সমাজে বাস করা কিছু মানুষ যে কতটা বিকৃত মানসিকতার হতে পারে তা প্রমাণিত হয়েছে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, কয়েক দিন আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মুখে লাথি মারাসহ ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে একদল যুবক। শুধু তা-ই নয়, এই পৈশাচিকতার দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও করেছে তারা। অভিযোগ রয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বড়খালের পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম, আবদুর রহিমসহ পাঁচজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ৩২ দিন পর গত রবিবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন; কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন যুবক তাঁর পোশাক কেড়ে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এ সময় তিনি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু এক যুবক কয়েকবার তাঁর মুখমণ্ডলে লাথি মারে এবং পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। তাঁর শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাতও করতে থাকে। তার নগ্ন ছবি ধারণের চেষ্টা চালায় তারা। একজন হাত উঁচিয়ে তাকে উৎসাহ দেয়। আরেকজন তাঁর শরীরের অবশিষ্ট পোশাক টেনে নেয়। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে বলে চিৎকার করে একজন। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হচ্ছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ডাকাতদের হাতে মা ও মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে, বরগুনার তালতলীতে এক শিশু, নোয়াখালীর চাটখিলে এক স্কুলছাত্রী এবং বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? সমাজের এমন অধঃপতিত অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। সালিশের নামে সিলেটে নূরজাহান নামের এক গৃহবধূকে পাথর মেরে হত্যা, টিএসসিতে বাঁধন নামের একটি মেয়েকে বিবস্ত্র করে উল্লাস করার মতো অনেক ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর দেশব্যাপী হত্যা-নির্যাতনের উৎসব করার মতো ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতায়ই দেশে আজ গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য সব অপরাধ নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে, অপরাধীরা শাস্তি পেলে আজকে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এবং বন্ধ হোক সব বর্বরতা আমাদের প্রত্যাশা।