প্রশান্ত কুমারকে ধরতে হবে

0

সংবাদপত্র, টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিনই দুর্নীতির কোনো-না-কোনো খবর প্রকাশিত হচ্ছে। দুর্নীতির এসব খবরের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, বোর্ড চেয়ারম্যান, প্রকল্প কর্মকর্তা কেউ বাদ যাচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবরও আসছে। সেই খবরের সাথে নিষেধাজ্ঞার বেড়া টপকে বিদেশে সপরিবারে পালিয়ে যাবার অবাক করা খবরও থাকছে। এমনই এক দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যম ও ফেসবুকে। এতে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। তিনি মতার অপব্যবহার করে, নিজের পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ লুটে নিয়েছেন। আরও উদ্বেগের বিষয়, জানা গেছে এ অর্থের সিংহভাগই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন, যার পরিমাণ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ লুটের পাশাপাশি তিনি অর্থ পাচারকারীও বটে। এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা সেলসহ বিভিন্ন সংস্থা ও পত্রিকার অনুসন্ধানে। ঢাকার একটি শীর্ষ দৈনিকের খবরে জানা যায়, সাম্প্রতিক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম সামনে এলে তদন্তে নামে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা। দুদকের অনুরোধে বিএফআইইউ প্রশান্তের অর্থ লেনদেন নিয়ে এক প্রতিবেদন তৈরি করে। এতেও তার ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির চিত্র উঠে আসে।
প্রশান্ত কুমার হালদারের এত বড় দুর্নীতির খবর অনেককেই হতবাক করে দেয়। বড় দুর্নীতিবাজরা মতার অপব্যবহার করে অথবা প্রভাব খাটিয়ে এভাবেই দুর্নীতি করে থাকে। তবে এতবড় দুর্নীতি, কারও একার পে করা সম্ভব নয়। এ েেত্র অন্যদের সহযোগিতা অবশ্যই রয়েছে। জানা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদারের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক অসাধু কর্মকর্তা পেয়েছেন মোটা অংকের ভাগ। কাজেই প্রশান্তের পাশাপাশি তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী প্রশান্ত কুমার হালদার বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে আছেন। তার বিদেশযাত্রার ওপর নাকি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে পালিয়ে গেলেন সেটাই প্রশ্ন। যারা তাকে পালাতে সাহায্য করেছে তাদেরও ছাড়া উচিৎ নয়। প্রশান্তকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে অবশ্যই। যে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তাও ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে তার সকল সহযোগীকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে। আমরা দেখছি সাম্প্রতিককালে দুর্নীতির বিষয়ে দুদক বেশ তৎপর হয়েছে, এটি আশাব্যঞ্জক। বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। আমরা মনে করি, এককভাবে দুদকের পে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে না, কিছুটা প্রতিরোধ করা যাবে হয়তো। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সরকারকেই নানামুখী পদপে গ্রহণ করতে হবে। তবে এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তাদের নির্বাচনী ইশতেহার কার্যকর করা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার তার জিরো টলারেন্সের ঘোষণা কার্যকর করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।