প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হেলা করার নয়

0

গতকাল দৈনিক লোকসমাজসহ দেশের প্রায় সব পত্রিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম ছিল ‘শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এ আশঙ্কা প্রকাশ কেেছন। একই সাথে তিনি রিস্থিতি মোকাবেলায় অগ্রিম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন॥ শীতের আগমনে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের এই আশঙ্কাটি প্রধানমন্ত্রী এর আগেও দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি একই রকম বক্তব্য ও নির্দেশনা দেন। সংবাদ মাধ্যমের তথ্যানুযায়ী এটা প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ভাবনার বিষয় নয়। তিনি কথাটি বলছেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্তা, জাতিসংঘ স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কবার্তা এবং দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কারিগরি কমিটির মতামত পর্যালোচনায়। সঙ্গত কারণে তাঁর এ নির্দেশনা স্বাস্থ্য ববিাগ থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি বলেই আমা মনে কির। এক্ষেত্রে কারো গাফিলতি জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ হতে পরে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের মনে রাখা আবশ্যক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সপ্তম মাসে এসে দেখা যাচ্ছে, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৭২ শতাংশই ঘটেছে শেষ তিন মাসে। এরই মধ্যে চলছে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের তোড়জোড়। একদিন আগে দেশে মোট করোনায় আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত ছিলো তিন লাখ ৪৮ হাজার ৯১৬ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে চার হাজার ৯৩৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৫ জন। দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন চিকিৎসকরা। আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সক্রিয় থেকেছেন করোনা মোকাবেলায়। দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বিভিন্ন সময়ে ওঠানামা করেছে। শনাক্তের হার কমলেও তা সন্তোষজনক নয়। মৃত্যুর হার কমছে না। অন্যদিকে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সব কিছু খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেতি হচ্ছে। গণপরিবহন, অফিস-আদালত, পথ-ঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্যের েেত্র এক ধরনের ‘অনিরাপদ স্বাভাবিকতা’ দেখা যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাঁদের মতে, এখন যেভাবে দেশের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে, এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সামনে পরিস্থিতি আবার খারাপ হবে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাঁদের। কাজেই এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার েেত্র কড়াকড়ি আরোপের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে যখন করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যুসূচকে বাংলাদেশ আগের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে এসেছে, তখন বিশেষ সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মাঠ প্রশাসনে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নয়, ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তাঁর ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশের প্রথম সারির একদল চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ, রোগতত্ত্ববিদ ও বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই কমিটিও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে; কিন্তু তা কোনো কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনা যায়নি। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ এক দফা কমে গিয়ে আবার বেড়ে গেছে। বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও দ্বিতীয় সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করছে। সামনে শীত মৌসুম আসছে। শীতে অ্যাজমা, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তরা গরমকালের তুলনায় বেশি জটিলতায় ভোগে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার শীতে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিলে পরিস্থিতি আবার গত জুন-জুলাই মাসের মতো বা তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় যেতে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। যে প্রশ্নটি বারবার ঘুরেফিরে আসছে, তা হলো ব্যবস্থাপনার সংকট। করোনাভাইরাস মোকাবেলার েেত্র কি ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি থেকে যাচ্ছে? বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সামনের দিনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার েেত্র সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনাই পারে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে। আমরা প্রত্যেকের নিজস্ব সতর্কতা ও প্রস্তুতি প্রত্যাশা করি।