পেঁয়াজ নিয়ে গড়িমসি করবেন না

0

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। কোনো আশ্বাসেই বিশ্বাস মিলছে না কারো। এবারও গত বছরের মতো হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজারে। খোদ রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বাজারগুলোতে বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশাসন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি গত বছরও সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ভারত একইভাবে হাতই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব পড়েছিল দেশের বাজারে। গত বছরও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। দাম আরো বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় বেশি করে পেঁয়াজ কিনে রাখে অনেকে। পেঁয়াজের মজুদ ‘সন্তোষজনক’ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও অস্থিরতা বন্ধ করা যায়নি। পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে ৩শ’ টাকা কেজিতে পৌঁছায়। চলতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে আগে থেকেই সতর্ক ছিল বলে মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি চূড়ান্ত করলেও বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ভারত থেকে প্রতি টন ২৫০ ডলার মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজারদর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবেন না, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ সরবরাহ লাইনে আছে বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তারা টিসিবির মাধ্যমে ত্রিশ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছে না যে কারণে গতকাল লোকসমাজসহ দেশের সব পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়েছিল পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি। যশোরে একদিনে কেজিতে ত্রিশ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর ছিল লোকসমাজের প্রধান শিরোনাম। সব পত্রিকায় ছিল একই খবর। মূল্য বৃদ্ধির খবরের সাথে ছিল ক্রেতার দুর্ভোগের খবর। ক্ষেত্র বিশেষ বেশি পেঁয়াজ বিক্রির খবর থাকলেও বাস্তবে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ ছিল কম। কেজির বদলে আড়াইশতে নেমেছে ক্রেতা। এ অবস্থা দীর্ঘ হলে ক্রেতার বড় অংশ আরও কম কিনতে বাধ্য হবে। এর কারণ, আমরা সবাই জানি। গত সাড়ে পাঁচ মাসের করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে অনেক মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজারের অস্বস্তি। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। মোটা চাল, সবজি, আলু ও ডিমের দাম বেড়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে পণ্য কিনতে। বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে শঙ্কিত করছে মানুষকে। উসকে দিচ্ছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের স্মৃতি। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানুষকে শঙ্কিত করে তুলছে। তাদের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি আছে বলে কেউ মনে করছে না।
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এ সত্য আমাদের সবারই জানা। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা সরকারের দায়িত্ব। গত বছরের মতো অস্থিরতা তৈরির সুযোগ না দিয়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। সরকারের সে সুযোগ হয়েছে ভারত গতকাল পেঁয়াজ দিতে রাজি হওয়ায়। বাণিজ্যিক স্বার্থে হোক আর সম্পর্ক রক্ষায় হোক ভারতের এই সিদ্ধান্ত দ্রুত ক্যাশ করা সরকারের প্রধান কর্তব্য। আমরা আশা করবো, সরকার এক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি করবে না।