ফের টানা পতনে দুগ্ধপণ্যের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী, দেশে দেশে টানা লকডাউন, চাহিদায় হঠাৎ পতন, আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে আসা—এমন নানা সংকটে চলতি বছরের শুরু থেকে দীর্ঘ সময় দরপতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দুগ্ধপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার। তবে মে মাসের শেষ ভাগে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাজার পরিস্থিতি, যা জুলাইয়ের মধ্যভাগ অবধি অব্যাহত ছিল। তবে এরপর ফের মন্দার মুখে পড়ে দুগ্ধপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার। নিউজিল্যান্ডে জুলাইয়ের শেষে অনুষ্ঠিত একটি, আগস্টের পরপর দুটি ও সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক নিলামে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক টানা ঋণাত্মক ছিল। গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড (জিডিটি) অকশনের প্রাইস ইনডেক্স বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। খবর রয়টার্স ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।
জিডিটি অকশনে সর্বশেষ চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে। ওই নিলামে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছিল। এর পর থেকে আন্তর্জাতিক নিলামে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। এ ধারাবাহিকতায় ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে এ সূচকমান আগের নিলামের তুলনায় কমে দশমিক ৭ শতাংশ। আগস্টে দুটো নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত নিলামে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায়। পরবর্তী নিলাম অনুষ্ঠিত হয় ১৮ আগস্ট। ওই নিলামে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় আরো ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যায়।
সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বরের নিলামে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় আরো ১ শতাংশ কমেছে। এ নিলামে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৭৪০ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৬৫৬ টন। সর্বশেষ নিলামে বিক্রি হওয়া দুগ্ধপণ্যের গড় দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ২ হাজার ৯৫৫ ডলার। এ সময় মাখন, পনির ও ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম আগের তুলনায় কমে এলেও ল্যাকটোজ ও ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে।
সর্বশেষ নিলামে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন মাখনের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৩৪ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। একই চিত্র দেখা গেছে পনিরের দামেও। সর্বশেষ নিলামে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে দুগ্ধপণ্যটির গড় দাম আগের নিলামের তুলনায় দশমিক ৪ শতাংশ কমে টনপ্রতি ৩ হাজার ৪২৮ ডলারে নেমে এসেছে। এ নিলামে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৮৪ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ২ শতাংশ কম।
তবে বেশির ভাগ দুগ্ধপণ্যের দাম আগের তুলনায় কমে এলেও সর্বশেষ নিলামে ল্যাকটোজ ও ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে। এ সময় ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন ল্যাকটোজের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। একইভাবে সর্বশেষ নিলামে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। নিউজিল্যান্ডে পরবর্তী জিডিটি অকশন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রতি মাসে দুটি করে জিডিটি অকশন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ মাসভিত্তিক গ্লোবাল ফুড ইনডেক্সেও দুগ্ধপণ্যের বাজার পরিস্থিতিতে তুলনামূলক শ্লথ ভাব উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চলতি বছরের আগস্টে আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম তুলনামূলক অপরিবর্তিত ছিল। এ সময় দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১০২ পয়েন্টে। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত আগস্টে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি ছিল। মূলত বাড়তি উৎপাদনের বিপরীতে করোনাকালে চীনসহ শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় চাহিদা কমে আসায় টানা কয়েকটি আন্তর্জাতিক নিলামে দুগ্ধপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।