এমন মৃত্যু আর চাই না

0

নারায়ণগঞ্জের এমন মর্মান্তিক পরিণতির জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। মুসল্লিরা এশার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন মসজিদে। ফরজ নামাজ শেষ করে সুন্নত নামাজ পড়তে শুরু করেছিলেন অনেকেই। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় মসজিদে থাকা ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, গ্যাস লিকেজের কারণে ঘরময় ছড়িয়ে ছিল দাহ্য গ্যাস। আতঙ্কিত মুসল্লিরা হুড়াহুড়ি করে বাইরে বেরিয়ে এলেও বেশির ভাগই মারাত্মক দগ্ধ হন। ৩৮ জনকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে জুয়েল নামের সাত বছরের এক শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, আহত অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সারা দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অনেক বিশিষ্টজন এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।
প্রাথমিকভাবে এই মারাত্মক অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে দুটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে এসি বিস্ফোরণ, অপরটি মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাস মসজিদের আবদ্ধ কে জমা হওয়া। এখন তদন্ত সাপেে হয়তো সঠিক কারণটি আমরা জানতে পারব। এ দুটি কারণেই সম্প্রতি বেশ কিছু শোকাবহ ঘটনা ঘটেছে। এসি বিস্ফোরণের কারণে ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে চারজন রোগীর মৃত্যু হয়। অনেক বাড়িঘরেও এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তার পরও আমরা কি যথেষ্ট সাবধান হয়েছি? সম্ভবত হইনি। গ্যাস দুর্ঘটনা তো এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরবাড়িতে ব্যবহারকারীদের অসতর্কতা যেমন আছে, তেমনি আছে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার গাফিলতি। মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের যে লাইনটি গিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তার কোনো সংস্কার হয়নি। দুর্ঘটনার পর মাটি সামান্য খুঁড়ে সাবানপানি দিয়ে দেখা গেছে গ্যাসের পাইপ থেকে বুদবুদের আকারে গ্যাস বেরোচ্ছে। এখন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও হতাহতের দায়-দায়িত্ব কে নেবে? প্রত্যদর্শীরা জানান, এশার নামাজের শুরুতে মসজিদে বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ আসার পরপরই এসিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর পরই আবার মসজিদের বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে চারতলা মসজিদটি থেকে নেমে আসা ছিল আরেক দুরূহ কাজ। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগে স্থানীয়রা অনেককে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আহতদের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আমরা এমন শোকাবহ অগ্নিদুর্ঘটনা আর দেখতে চাই না। প্রতিটি বড় বড় দুর্ঘটনার পর নানা রকম আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখা যায় না বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকায় যেভাবে গ্যাসের সরবরাহ লাইন ছড়িয়ে রয়েছে, যেভাবে মাথার ওপরে বিদ্যুতের তার ঝুলে আছে, তাতে আমরা এক ভয়ানক ঝুঁকিতে রয়েছি। সেই সঙ্গে সংস্থাগুলোর গাফিলতি ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। আমরা চাই, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় মুসল্লিদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক। একই সাথে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করা হোক।