আম্পানে মণিরামপুরে এক গ্রামে পাঁচ জনের প্রাণহানি

0

এস. এম মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে যশোরের মনিরামপুর। এখানে গাছ চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী ও পিতা-পুত্রসহ ৫ জন। বিধ্বস্থ হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি। ভেঙ্গে গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুতের প্রায় তিন’শ পোল (খুঁটি) ভেঙ্গে এবং তার ছিঁড়ে গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে টেলিফোন লাইন। কয়েক হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। সরকারিভাবে এসব মানুষকে এখনও পর্যন্ত কোন সাহায্য করা হয়নি। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে মনিরামপুর পৌরশহরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মনিরামপুরে গত বুধবার দুপুর থেকে ঝড়ো হাওয়া এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এক নাগাড়ে চলতে থাকে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর থেকে ঝড়বৃষ্টি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। রাতভর চলে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডব। এই তান্ডবে মশ্বিমনগর ইউনিয়নে গাছ চাপা পড়ে নিহত হন পাঁচজন। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, বুধবার রাতে গাছ চাপায় পারখাজুরা গ্রামেই পাঁচজন নিহত হন। এরা হলেন-পারখাজুরা গ্রামের ঋষিপাড়ার খোকন দাস (৭০) ও তার স্ত্রী বিজন দাসী (৬০), দফাদারপাড়ার কৃষক ওয়াজেদ আলী (৫০) ও তার ছেলে মো. ইসা (১৫) এবং একই পাড়ার মৃত জবেদ আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৭০)।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পৌরশহরের গাংড়া, মহাদেবপুর, হাকোবা, দুর্গাপুর, কামালপুর, বিজয়রামপুর এবং উপজেলার মশ্বিমনগর, ঝাঁপা, চালুয়াহাটি, শ্যামকুড়, খানপুর, হরিহরনগর, মনোহরপুর, নেহালপুর, কুলটিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ও আধা পাকা বাড়িঘর বিধ্বস্থ হয়। হোগলাডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রইচ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা, চাঁদপুর মাঝিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সবুজ পল্লী মহাবিদ্যালয়, মনিরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, তিনি শুক্রবার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ ২৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাতে পেয়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হবার কারণে ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান করতে আরো দু’একদিন সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার অরুন কুমার কুন্ডু জানান, সমিতির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৬০ টি পোল ভেঙ্গে পড়েছে। তবে এর পরিমান আরো বাড়তে পারে। এছাড়া তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাতদিন এক হাজার শ্রমিক কাজ করছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় তিনদিন পর শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে মনিরামপুর পৌরশহরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিদ্যুৎ লাইন দ্রুত মেরামত করতে এই মুহূর্তে প্রায় পাঁচ’শ লাইনম্যান প্রয়োজন। কিন্তু এ সমিতিতে কাঙ্খিত লাইনম্যান না থাকায় পিরোজপুর ও শরিয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে এক’শ জন লাইনম্যান (পোলে উঠে কাজ করার জন্য) মনিরামপুরে আনা হচ্ছে। তিনি আশা করেন দু’একের মধ্যে সমিতির আওতাধীন সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তীব্রতায় ভেঙ্গে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা। কয়েক’শ হেক্টর জমির বোরো পাকা ধান জমিতে নষ্ট হয়ে গেছে। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, জামরুল, লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি ক্ষেত। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তিনি খবর পাবার পর সরেজমিন গিয়ে জেনেছেন খাকুন্দি গ্রামের কৃষক গোপাল ব্যানার্জীর মৃত্যু গাছের চাপায় হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বৃহস্পতিবার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী শুক্রবার পরিদর্শনে যান পারখাজুরা গ্রামে নিহত পাঁচজনের বাড়িতে। এ সময় তারা নিহতের পরিবারবর্গকে সান্ত¡না এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি রোহিতা, ভান্ডারী, খেদাপাড়া, তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কয়েকজনকে আর্থিক সহযোগিতা করেন।