শুধুমাত্র দেশের মসজিদের মুসল্লি ছাড়া আর কেউ মানছে না শারীরিক দূরত্ব

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা আমজনতা মোটেও মানছে না। দেশের হাট-বাজার, দোকানপাট ও শপিং মলগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় বলে দেয় অসচেতনার কথা। দেশে শুধুমাত্র মসজিদগুলোতে জামাতের নামাজে মুসল্লিরা মেনে চলেছেন সরকারি নির্দেশনা। ওলামায়ে কেরামগণ বলছেন, বর্তমান মহামারির পরিস্থিতিতে শুধু সরকারি নির্দেশনা নয় , শরিয়তের বিধানমোতাবেক তারা মসজিদে জামাতে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলছেন।
প্রাণঘাতী হয়ে আবির্ভাব হওয়া মহামারি করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ৬ এপ্রিল দেশের মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে জানায়, মসজিদে ৫ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। আর শুক্রবার জুমার নামাজে জামাতে অংশ নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ জন। এছাড়া তারাবির নামাজে জামাতে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবেন। সারা দেশে তা ৭ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। মসজিদের ইমাম,খতিব ও মসজিদ পরিচালনা কমিটিগুলো সরকারের নির্দেশনা মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাহে রমজানের অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ইবাদতের সুবিধার্থে, ওলামায়ে কেরামগণের অনুরোধে, সরকার গত ৭ মে থেকে দেশের মসজিদগুলো খুলে দেয়। এ ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ মুসল্লিরা ওই দিন জোহর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবি মসজিদে আদায় করার অনুমতি পান।
মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় প্রসঙ্গে কথা হয় যশোর রেল স্টেশন জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা সাইফুল ইসলামের সাথে। রবিবার তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সরকারি নির্দেশনা তারা পুরোপুরি মেনে চলেছেন। মুসল্লিদের উভয় পাশে, সামনে, পেছনে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। তাদের মসজিদে ৩০ থেকে ৪০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করছেন। তিনি আরও জানান, তিনি যতক্ষণ না দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন , ততক্ষণ নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকেন। রেল স্টেশন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও যশোর জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী লাইলাতুল ক্বদরের ইতিকাফে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হযনি। তবে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গত শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেছেন, বিশ^ব্যাপী এই মহামারিতে শুধু সরকারি নির্দেশনা নয়. বরং শরিয়তের বিধানমোতাবেক নামাজে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদ দেওয়া আছে।
কথা হয় শহরের চৌরাস্তায় কোতয়ালি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি রবিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, তারাও সরকারি নির্দেশনা মেনে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিদের নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবি আদায় করছেন। তবে তিনি এও জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ ফুট দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রে হয়ত সামান্য হেরফের হয়ে যায়। এইচএমএম রোডের দড়াটানা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আমানুল্লাহ রবিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদে তারা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করছেন। লোন অফিস পাড়ায় সম্মিলনী স্কুল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাবিুল্লাহ ও আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সম্মিলনী স্কুল মসজিদের খতিবকেও মসজিদে কড়াকড়ি নিয়ম মেনে মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
মহামারির বিষয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় দেড় হাজার বছর আগে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ বা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার নির্দেশনা দেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর বাণী : ‘যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরুপ মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছো, তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ (বুখারী,আস-সহীহ ৫/২১৬৩, মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৩৮,১৭৩৯)।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বৈশি^ক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে একজনের শরীরে প্রথম এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপরই করোনাভাইরাস চীনের সীমান ছাড়িয়ে গোট বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত বিশে^র ২১৩ টে দেশ ও অঞ্চলের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ডোমিটারস এর তথ্যমতে সারা বিশে^ এ পর্যন্ত মোট ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৮৪৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ২৬০ জন। এদিকে, খুলনা বিভাগীয স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর থেকে তথ্যে জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে যশোর জেলায়। এই জেলায় রোগীর সংখ্যা ৯০।