সাধারণ চিকিৎসার পৃথক ব্যবস্থা জরুরি

0

দেশে এখন সাধারণ মানুষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে করোনা বহির্ভূত চিকিৎসা। বিত্তশালীদের জন্য ভিআইপি হাসপাতাল থাকলেও সাধারণের জন্য খোলা শুধু সরকারি হাসপাতাল। হাজার রকম রোগের চিকিৎসার এই স্থানটি এখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। করোনারীর জন্য জেলা পর্যায়ে কোন হাসপাতাল না থাকায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সকলকে। ফলে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন সর্বত্র। ফলে, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। ভয়ে চিকিৎসকরা যেমন রোগী দেখছেন না, তেমনি খুব বিপদে না পড়লে কেউ হাসপাতালে ঢুকছেন না। এতে ঘরে ঘরে বাড়ছে রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। করোনা যেভাবে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে তাতে এই অবস্থা চলতে থাকলে এই রোগ সবিস্তার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ এখনই তৈরি করতে হবে। সরকারকে সময়ের গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি ভাবতে হবে।
আমরা জানি, দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, কিনিক, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র একেবারে কম নেই। আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালও আছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা, সেবা ও পরীা-নিরীার জন্য সরকারি কিছু হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি কিছু হাসপাতালও এগিয়ে আসতে পারে, এমন ধারণা খুবই স্বাভাবিক। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তরফে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছিল বটে, তবে তাদের ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। করোনাকারণ যুক্ত হওয়ায় দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যেতে পারে, যার ল্য হবে, করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, সাধারণ ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে হবে পৃথক ব্যবস্থাপনা, যার ল্য হবে করোনাবহির্ভূত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। করোনাক্রান্ত অন্যান্য দেশে কীভাবে করোনা ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বা হচ্ছে, প্রয়োজনে সেটাও বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। স্বীকার করতেই হবে, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথেষ্ট পারঙ্গমতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সর্বত্রই একটা হযবরল ল্য করা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একলা চলো নীতি অনুসরণ করছে। তাই যদি না হবে, তবে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত টেস্টিং কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যাবে না কেন? এ মুহূর্তে যেখান থেকে যে সহযোগিতা আসে, তাই নিতে হবে। না নেয়া দুর্ভাগ্যজনকও। ডাক্তার-নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। এতগুলো ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসাকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব অন্যদের ওপর পড়া খুবই সম্ভব। করোনাযুদ্ধের একেবারে সামনের সারির যোদ্ধাদেরই যদি এতটুকু নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে যুদ্ধে বিজয় অর্জন কীভাবে সম্ভব হবে? করোনার কারণ দেখিয়ে সাধারণ ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। যে কোনো মূল্যে সাধারণ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এসবের পাশাপাশি করোনাবহির্ভূত রোগের চিকিৎসায় পৃথক হাসপাতাল নিশ্চিত করার জরুরি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। অন্যথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর যে অভিযোগ চলছে, তা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।