কোভিড-১৯ কিভাবে হার্ট অকেজো করে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস মানবদেহের কোন কোন কোষকে আক্রমণ করে তা শনাক্তে বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন। এক্ষেত্রে তারা মানবদেহের একটি ম্যাপ করছেন। ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন যে, কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয় নাক ও চোখ দিয়ে। এ ছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্র ও হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ তন্ত্রও করোনা ভাইরাস গ্রহীতা হিসেবে পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ন্যচার মেডিসিন নামের জার্নালে। তাতে নাকের দুটি বিশেষ ধরনের সেলকে হাইলাইট করা হয়েছে। এ দুটি সেল গবলেট এবং সিলিয়েটেড সেল নামে পরিচিত। একেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন এই কোষগুলোতে সেইসব প্রোটিন উচ্চ মাত্রায় থাকে, যা ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস আমাদের দেহের বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করতে পারে। এই গবেষক দলে রয়েছেন ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইন্সটিটিউট, ইউনিভাসির্টি মেডিকেল সেন্টার গ্রোনিঙ্গেন, ইউনিভার্সিটি কোটে ডি’আহুর, সিএনআরএস, নাইস-এর বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, তাদের গবেষণা এটা ব্যাখ্য করতে সহায়ক হবে যে, কিভাবে করোনা ভাইরাস উচ্চ মাত্রায় একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়। তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের জন্য প্রয়োজন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন। তা হলো এসিই২ এবং টিএমপিআরএসএস২। এই দুটি প্রোটিন ব্যবহার করে সে মানুষের দেহকোষে প্রবেশ করে। প্রথম প্রোটিনটি ব্যবহার করে এই ভাইরাস নোঙর করে। দ্বিতীয় প্রোটিনটি দেহকোষে ছড়িয়ে পড়তে সহায়ক হয়। বিশ্বজুড়ে এখনও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার ঘটে তা বোঝার জন্য। এর উদ্দেশ্য বিস্তার সম্পর্কে যদি যথাযথভাবে জানা যায় তাহলে এর বিস্তার রোধ করা যাবে এবং টীকা উদ্ভাবন করা যাবে। এটা জানা গিয়েছে যে, ২০০৩ সালের সার্স মহামারি সৃষ্টি করেছিল যেভাবে ভাইরাস কোভিড-১৯ বা সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাস সেই একই কৌশলে সংক্রমণ ঘটায় আমাদের কোষে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে সংক্রমণের পর এই ভাইরাস প্রকৃতপক্ষে কোন ধরণের সেল বা কোষে প্রবেশ করে এবং টার্গেট করে সেটা এর আগে যথাযথভাবে নির্ধারণ করা যায় নি। তাই ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সংক্রমিত হন নি এমন ব্যক্তিদের দেহ থেকে কমপক্ষে ২০ রকম বিভিন্ন রকম টিস্যুর ডিনোম নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তারা দেখার চেষ্টা করেছেন কোন বিশেষ কোষ ওই গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রোটিনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।
এই গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক ইমপেরিয়ালের ন্যাশনাল হার্ট অ্যান্ড লাঙ্গ ইন্সটিটিউটের ড. মিশেলা নোসেডা গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন। এতে বলেছেন এই ভাইরাস শুধু শরীরকেই আক্রান্ত করে এমন না, এটা শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার পথের বাইরের অঙ্গগুলোকেও টার্গেট করতে পারে। এ থেকে সিস্টেমিক রোগ সৃষ্টি হতে পারে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ২০ ভাগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের হার্টের টিস্যু নষ্ট হয়ে গেছে। তার ফলে হার্টফেইল করেছে। তাই এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কিভাবে এই ভাইরাস হার্টের কোষে পৌঁছে। এটা নির্ধারণ করত হার্টে পৌঁছার ম্যাপিং করা হয়েছে।