মোংলার বাণীশান্তা যৌনপলী লকডাউন

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে মোংলা বন্দরকেন্দ্রীক গড়ে ওঠা পশুর নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ বাণীশান্তা যৌনপল্লীটি অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (বন্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে। নদীর পাড় ও গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত যৌনপল্লীতে গিয়ে দাকোপ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যৌথভাবে গত সপ্তাহে এ লকডাউনের ঘোষণা দেয়। মোংলা বন্দরের পশুর নদীর পশ্চিম পাড়স্থ খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা যৌনপল্লীটির অবস্থান হলেও মূলত মোংলা বন্দরকেন্দ্রীক লোকজনই এ পল্লীতে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করতো। এ পল্লীতে ইতিমধ্যে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরা নদীর পাড়ে যাতে কোন ট্রলার না ভেড়ে ও উদ্ভুদ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পল্লী এলাকায় সার্বক্ষণিক বিশেষ টহল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছে দাকোপ পুলিশ প্রশাসন।
দাকোপের ইউএনও আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পশুর নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত বাণীশান্তা যৌনপল্লীতে জায়গা কম, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে আগত বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজের বিদেশি নাবিক (ক্রু) ও কার্গো কোস্টার জাহাজের নাবিকদেরও এ পল্লীতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যৌথভাবে গত ২৪ মার্চ থেকে যৌনপল্লীটি অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করে দেয়। এ পল্লীতে ৮৭ টি ঘরে প্রায় শতাধিক যৌনকর্মী ছাড়াও বাড়িওয়ালি, মাসী, দোকানদার ও প্রায় ৬৫ জন ছেলে-মেয়েসহ অন্তত ৫ শতাধিক লোকের প্রতিনিয়ত আনাগোনা ছিল। তিনি আরও জানান, মানবিক কারণে এ সময়ে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল ও ৫শ করে টাকা সহায়তা করা হয়েছে। অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক পরিবারকে আরো চাল ও অর্থ সহায়তা দেয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। দাকোপ থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম চৌধূরী জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পল্লী এলাকায় নদী পথে ট্রলারযোগে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ভুদ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পল্লী এলাকায় পুলিশ সার্বক্ষণিক বিশেষ টহল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাণীশান্তা যৌনপল্লীতে গিয়ে কথা হয় যৌন কর্মীদের সংগঠন নারী জাগরণী সংঘের সভানেত্রী রাজিয়ার সাথে। তিনি চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা পাবার কথা স্বীকার করে বলেন, এখন পর্যন্ত যে সরকারি সহায়তা প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। পল্লীর প্রতিটি পরিবারে প্রায় ৩ থেকে ৭/৮ জন সদস্য রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের দেয়া ১০ কেজি চাল ও ৫শ টাকা অনেকেরই শেষের পথে। এ ছাড়া অনেক যৌনকর্মীর জমানো অর্থও শেষ হওয়ার পথে। অপরদিকে প্রত্যেক যৌনকর্মীকে বাড়িওয়ালাকে মাসিক দেড় হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। এ অবস্থায় এ নেত্রী মানবিক কারণে আরো বেশি সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি ও বকেয়া ঘর ভাড়া যাতে না নেয়া হয় তার জোরালো দাবি জানান।