ভিয়েতনামে ১ বছরের সর্বোচ্চে চালের রফতানি মূল্য

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় রফতানি চাহিদা বেড়েছে ভিয়েতনামি চালের। এর জের ধরে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম বেড়ে এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে ভিয়েতনামি চালের বিকল্প রফতানি বাজার খুঁজতে হবে। তা না হলে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস চীনসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোয় ভিয়েতনামি চালের রফতানি বাজার সংকুচিত করে ফেলতে পারে। ভিয়েতনামের পাশাপাশি সর্বশেষ সপ্তাহে ভারত ও থাইল্যান্ডেও চালের রফতানি মূল্য বাড়তির দিকে। খবর বিজনেস রেকর্ডার ও ভিয়েতনাম নিউজ।
ভিয়েতনামের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৮০ ডলারে। এর আগের সপ্তাহেও খাদ্যপণ্যটি টনপ্রতি ৩৫৫-৩৬০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনে সর্বোচ্চ ২৫ ডলার বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই ভিয়েতনামের বাজারে চালের সর্বোচ্চ রফতানি মূল্য।
হো চি মিন সিটিকেন্দ্রিক ট্রেডাররা জানান, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া থেকে চালের একের পর এক আমদানি অর্ডার আসছে। মূলত থাইল্যান্ডে খরার কারণে চালের রফতানি মূল্য তুলনামূলক বেশি থাকায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চাল আমদানিতে ভিয়েতনামের প্রতি ঝুঁকেছে। চাহিদা বাড়তির দিকে থাকায় দেশটিতে চালের রফতানি মূল্যও আগের তুলনায় বেড়ে এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গেছে।
এ বিষয়ে ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান দো হা নাম বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় রফতানি চাহিদা বৃদ্ধি ভিয়েতনামের চাল খাতের জন্য বড় একটি সুখবর। অনেক আমদানিকারক এখন থাইল্যান্ডের বদলে ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি বাড়াতে চাইছেন। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এমনকি নভেল করোনাভাইরাস ভিয়েতনামের চাল রফতানি খাতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো ধাক্কা লাগাতে পারেনি। তাই ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল রফতানি বাড়ানোর এটাই সময়।
ভিয়েতনামি ট্রেডারদের মতে, বাড়তি উৎপাদনের জের ধরে থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম দামে চাল রফতানি করতে পারছেন ভিয়েতনামি রফতানিকারকরা। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এটা বড় একটি সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত
ভিয়েতনাম বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। দেশটির চাল রফতানি খাতে চার বছর টানা প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরে ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে।
ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে দেশটি থেকে মোট ৬৭ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভিয়েতনাম থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৫০ হাজার টন।
ভিয়েতনামের ইতিহাসে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাল রফতানি হয়েছিল। এর আগে ২০১১ সালে দেশটি রেকর্ড সর্বোচ্চ চাল রফতানি করেছিল। ওই বছর ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান দো হা নাম জানান, চলতি বছর ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
চ্যালেঞ্জ নভেল করোনাভাইরাস
ভিয়েতনাম থেকে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয় ফিলিপাইনে। চীনা আমদানিকারকরা প্রতি বছর দেশটি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল আমদানি করেন। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস চীনের অর্থনীতিকে অনেকটাই স্থবির করে দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে চাল আমদানি কার্যক্রম। এখন চীনের সীমানা ছাড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়াসহ প্রায় ৩০টি দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। এতে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতি শঙ্কার মুখে পড়েছে। শ্লথ হয়ে এসেছে ব্যবসা-বাণিজ্য।
এ পরিস্থিতি ভিয়েতনামের ক্রমবিকাশমান চাল রফতানি খাতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এখনো ভিয়েতনামের চাল রফতানি খাতে নভেল করোনাভাইরাসের বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে চীনসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে রফতানি সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলে চালের বাড়তি রফতানি মূল্য এক ধাক্কায় কমে যেতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে চালের বিকল্প রফতানি বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ভিনাফুডস করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক বুই থি থান তাম। তিনি বলেন, একসময় ভিয়েতনাম থেকে রফতানি হওয়া চালের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। এখন শীর্ষ অবস্থান বদলালেও চীনের বাজার হিস্যা অনেকটাই রয়ে গেছে। এ কারণে নভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাব এড়াতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোয় চালের নতুন রফতানি বাজার খুঁজতে হবে ভিয়েতনামি রফতানিকারকদের।
ভারত-থাইল্যান্ডে বাড়তির দিকে দাম
শুধু ভিয়েতনামের বাজারে নয়, সর্বশেষ সপ্তাহে ভারত ও থাইল্যান্ডের বাজারেও চালের রফতানি মূল্য বাড়তির দিকে ছিল। এ সময় বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভারতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৭১-৩৭৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহেও দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য একই ছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরের পর বর্তমানে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতীয় চাল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওলামের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্তা বলেন, বেনিন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাড়তি রফতানি চাহিদা ভারতীয় চাল রফতানি খাতকে চাঙ্গা করে রেখেছে। ৫ শতাংশ ভাঙা চালের পাশাপাশি ভারত থেকে সুগন্ধি চালের রফতানি চাহিদাও বেড়েছে।
এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক থাইল্যান্ডের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৪৩০-৪৪৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহে সর্বনিম্ন রফতানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪২৫ ডলার। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে থাইল্যান্ডে চালের রফতানি মূল্য বেড়েছে টনে সর্বোচ্চ ২০ ডলার।
ব্যাংককভিত্তিক ট্রেডাররা জানান, ধান-চাল উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় খরা চলছে। এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ কমায় থাই রফতানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী চাল রফতানি করতে পারছেন না। ফলে বেড়েছে দাম।