নামের ভ্রান্তিতে বিনিয়োগকারীদের বিলাস

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কথায় রয়েছে- কার লাভের গুড় কে খায়। এর অর্থ হলো কাজ করল একজন, আর তার সুফল পেল আরেকজন। শেয়ারবাজারেও এমন উদাহরণ রয়েছে, যেখানে একটি কোম্পানির খবরের কারণে লাভবান হয়েছে আরেকটি কোম্পানি, যার সঙ্গে আসলে তার কোনো সংশ্লিষ্টতাই নেই। শুধু তা-ই নয়, যে কোম্পানির শেয়ার কেনায় হয়তো বিনিয়োগকারীদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, নাম বিভ্রাটের কারণে সেই কোম্পানির শেয়ারই বহুগুণ বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এমন দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বখ্যাত দুই প্রযুক্তি কোম্পানির নাম।
নেস্ট ল্যাবস ও নেস্টর ইনকরপোরেশন
নেস্টর ট্রাফিক সিস্টেমস ইনকরপোরেশন (Nestor, Inc.) ছিল স্বল্প মূলধনি একটি কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্রভিডেন্সভিত্তিক কোম্পানিটির কাজ ছিল রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের কাছে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা। এ খাতে উত্তর আমেরিকার চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি ছিল এটি। ‘ছিল’ বলতে হচ্ছে, কারণ কোম্পানিটির এখন আর নিজস্ব কার্যক্রম নেই। ২০০৯ সালে নেস্টরের সব সম্পদ কিনে নেয় তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও উত্তর আমেরিকার শীর্ষ ট্রাফিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী কোম্পানি আমেরিকান ট্রাফিক সলিউশনস (এটিএস) ইনকরপোরেশন। এটিএস সব সম্পদ কিনে নিলেও একটি ক্ষেত্রে কিন্তু নেস্টরের স্বকীয় সত্তা তখনো অবিক্রীত ছিল। তখনো ওটিসি মার্কেটে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন অব্যাহত ছিল। এটিএসের অধিগ্রহণের পরও নেস্টরের শেয়ার আগের নামেই (NEST) লেনদেন হচ্ছিল।
এই ট্রেডিং কোডই পরবর্তী সময়ে নেস্টরের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১০ সালে অ্যাপলের সাবেক প্রকৌশলী টনি ফ্যাডেল ও ম্যাট রজার্সের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় নেস্ট ল্যাবস (Nest Labs)। ‘নেস্ট (NEST)’ ব্র্যান্ডের স্মার্ট হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করত তারা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ৩২০ কোটি ডলারে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নেস্ট ল্যাবসকে কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয় মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল। খবরটি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। তবে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে খবরটি পৌঁছায় ভুলভাবে। নামের সাদৃশ্যের কারণে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। অনেকেই ধরে নেন গুগল হয়তো নেস্টর ইনকরপোরেশনকেই কিনে নিচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি কেনার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। এতে নেস্টরের শেয়ারের দরও বেড়ে যায় বহুগুণ।
অথচ মূল কোম্পানির নিজস্ব কার্যক্রম না থাকায় নেস্টরের শেয়ারের দর ছিল অনেক কম। এক সেন্টের চেয়েও কম দরে বিক্রি হচ্ছিল শেয়ারটি। অথচ গুগল কর্তৃক নেস্ট ল্যাবস অধিগ্রহণের খবর প্রকাশের পর সেই শেয়ারের দরই ১০ সেন্টে উঠে যায়। নাম বিভ্রাটে আখেরে লাভবান হন নেস্টরের বিনিয়োগকারীরা। গুগল ঘোষণা দিল নেস্ট ল্যাবস অধিগ্রহণের, আর দর বাড়ল নেস্টর ইনকরপোরেশনের।
টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্ট ও টুইটার ইনকরপোরেশন
নামের বিভ্রান্তিতে শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার ঘটনা সেটিই প্রথম নয়। আগেও এমনটি ঘটেছে। ১৯৭২ সালে বোস্টনে যাত্রা হয় টুইটার (Tweeter) হোম এন্টারটেইনমেন্টের। কনজিউমার ইলেকট্রনিক রিটেইল কোম্পানিটি ছিল একটি সীমিত দায়ের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যবসায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। ২০০৭ সালে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে তারা। একসময় কোম্পানিটির সব সম্পদ বিক্রি হয়ে যায়। পরের বছর বন্ধ হয় এর চেইন আউটলেটগুলো। শেল কোম্পানিতে পরিণত হয় টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্ট।
মূল কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হলেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রি তখনো চালু ছিল। সে সময় টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্টের ট্রেডিং কোড ছিল ‘TWTRQ’। এদিকে, ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার (Twitter) ইনকরপোরেশন। এর জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রও জমা দেয় তারা। এসব নথিতে টুইটার জানায়, তারা ‘TWTR’ ট্রেডিং কোড ব্যবহার করতে চায়। এদিকে আগে থেকেই টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্টের ট্রেডিং কোড ছিল ‘TWTRQ’।
দুই কোম্পানির ট্রেডিংয়ে কোডের সাদৃশ্য বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে দেয়। অনেকেই টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ার কিনতে উঠেপড়ে লাগেন। ফলে একদিনের ব্যবধানেই টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ারদর ৬৮৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
নাম বিভ্রাটের বিষয়টি বুঝে উঠতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দ্রুতই টুইটার হোম এন্টারটেইনমেন্টের ট্রেডিং কোড পরিবর্তন করে ‘THEGQ’ রাখা হয়।