ইভিএমে যেসব ‘সীমাবদ্ধতা’

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনকে সামনে রেখে গণমাধ্যমকর্মীদের সচেতনায় মক ভোটিংয়ের আয়োজন করেছিল ইসি। এ সময় ভোট দেয়া ও আলোচনায় ইভিএমের কিছু সীমাবদ্ধতা উঠে আসে। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে মক ভোটিং ও আলোচনায় ইসির পক্ষ থেকে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন, আইটি ইনচার্জ মেজর মো. মাজহারুল ইসলাম, আইটি সিস্টেম কনসালটেন্ট এ এইচ এম আবদুর রহিম খান ও সিস্টেম ম্যানেজার ফারজানা আখতার উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় এক সাংবাদিক বলেন, ‘যেসব কেন্দ্রে ম্যানিপুলেট (দখল বা অনিয়ম) হয়, সেসব কেন্দ্র কিছু লোক নিয়ন্ত্রণে নেয়। যে ভোটার তার এনআইডি নম্বর ও আঙুলের ছাপ নেয়ার পর তাকে বের করে দেয়া হয়। এরপর ভোটার ছাড়াই তারা ভোট দেয়। অর্থাৎ ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজন দেয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। গত নির্বাচনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশও হয়েছে।’ আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ রাখছেন। যদি ব্যালট ইউনিটেও আঙুলের ছাপ রাখতেন তাহলে কিছুটা নিশ্চিত হত। এখন কি বলা যাচ্ছে, আপনারা শতভাগ নিশ্চিত যে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই?’
এসব প্রশ্নের জবাবে ইসির উপস্থিত কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ‘যে ঘটনার কথা আপনারা বলছেন, ভোটের শেষ ধাপে ব্যালটেও আঙুলের ছাপ রাখার জন্য। সেখানেও যদি কেউ পিস্তল ঠেকিয়ে বলে এখানে ফিঙ্গার (আঙুলের ছাপ) দিয়ে যাও, তখনও তো কিছু করার থাকবে না। এটা আসলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ইস্যু।’ ইসির ইভিএম প্রস্তুত করেছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান এক সাংবাদিক। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ইভিএমে এমন সফটওয়্যার দেয়া যায় কি না যে, ভোটার যেখানেই ভোট দেন না কেন, তা কাউন্ট হবে অন্য জায়গায়। যেহেতু প্রিন্ট কপি আসছে না। এমন প্রোগ্রামিং করার সুযোগ আছে কি না?’
জবাবে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের এসব ইভিএমে এই ধরনের সুযোগ নেই। এসব ইভিএমের ভেতরে প্রোগ্রামিং করে দেয়া আছে। মেশিনগুলোতে অনেক আগেই প্রোগ্রাম সেট করে মাঠে দিয়ে দেই। কোন কেন্দ্রে কোন ইভিএম যাবে, তাও আমরা জানি না।’ ইসির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছে, ইভিএম নিয়ে যাদের অভিযোগ, তারা যেন টেকনিশিয়ান নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখে। এদিকে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইভিএমকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নীরবে নিঃশব্দে ভোট চুরির প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনে এসে কিছু ইভিএম পরীক্ষা করতে পারব। কিন্তু কেন্দ্রে যাবে হাজার হাজার ইভিএম। এই হাজার হাজার ইভিএমে স্থাপন করা প্রোগ্রাম আমাদের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।’ তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘ইভিএম থেকে সরে আসা সম্ভব না। ইভিএম নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। ইভিএমে ভোট হলে যার ভোট তিনিই দিতে পারবেন। একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবেন না। একবারের বেশি একজন ভোট দিতে পারবেন না। এতে আলাদা কোনো প্রোগ্রামিং নেই। কোনো ভোট কারচুপি হওয়ার সুযোগ নেই।’