সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ধর্মঘটের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, ক্ষুব্ধ অভিভাবক-শিক্ষার্থী

0

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে যশোরে সরকারি স্কুলে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। তারা নিজেরা পরীক্ষা হলে ডিউটি দিচ্ছেন না। কেউ দিতে চাইলে বাধা দিচ্ছেন। বাধার মুখে জিলা স্কুলে পরীক্ষা হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতিকারের জন্যে হাজির হয়।

অপরদিকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষকের সহায়তায় সকালের পরীক্ষা হওয়ার হয়। পরে স্কুলে তালা দেন শিক্ষকরা। তারা শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে বিদ্যালয় বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করান। ফলে দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এ সময় অনেক অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ঘেরাও করে।

৪ দফা দাবিতে যশোরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। দুইদিনই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে গেছে। সোমবার যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিফটে বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হলেও দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষা হয়নি। আর যশোর জিলা স্কুলে দ্বিতীয়দিনের মতো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার সরেজমিন যশোর কালেক্টরেট ভবন, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও জিলা স্কুলে দেখা যায় এ বিশৃঙ্খলা।
জামাল উদ্দীন, আজিজুল রহমান, গাজী আনিছুর রহমান ,সহিল উদ্দীন, জয়নাল আবেদিনসহ জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের দাবি, দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে এই আন্দোলন চলছে।

তারা জানান,সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডভিত্তিক (ক্যাডার) পদসোপানসহ চার দফা দাবিতে দেশের ৭ শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে।

তবে শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে ও বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে কেনো এই আন্দোলনের সঠিক কোনো উত্তর দেননি তারা। শুধু জানিয়েছেন, আমাদের কর্মসূচি আগে থেকেই ঘোষিত ছিল।

যশোর কালেক্টরেট চত্বরে জিলা স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র শফিকুল হাসান, আনিক হাসান, মাহমুদুল হাসাান অর্ণব ও সিয়াম জানায়, পরীক্ষা দিতে স্কুলে এসেছে। কিন্তু শিক্ষকরা বলছেন পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা না দিয়েই তাদের বাড়ি ফিরত হচ্ছে। আগে থেকে জানতে পারলে ভাল হতো। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকারের দাবিতে এসেছিল বলেও জানায়।

মামুনুর রশিদ, টুটুল, মুক্তি, মেফতাহ উদ্দীন, মনিরুজ্জামান, সালাউদ্দিন শাহীন ,পিকুলসহ অন্তত ৩০ জন অভিভাবক সন্তানদের পরীক্ষা হবে কিনা তা জানতে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান শিক্ষকের সাথে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েও পড়েন। এ সময় দিবা ও প্রভাতীর শির্ক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলা করতে দেখা যায়। পরে প্রধান শিক্ষক দিবার পরীক্ষা স্থগিত করেন মাইকে ঘোষণা দিয়ে।

এরআগে সকালে জিলা স্কুলেও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়। অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন মেনে নেওয়া যায় না।

কালেক্টরেট চত্বরে আলাপকালে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও অভিভাবক এহসানুল হক জানান, ভিন্ন একটি পক্ষের ইন্ধনে দেশকে অস্থিশীল করতে এ জাতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে একটি পক্ষ।

যশোর জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিন বলেন, শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প জনবল না থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমার বিদ্যালয়ের ৫২ জন শিক্ষক। সবাই এই আনেন্দালনের সাথে জড়িত। আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, প্রভাতী শিফটের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহিল উদ্দীনসহ ৭ জন দায়িত্ব নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষাকে) বহুবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে জেলা প্রশাসককে ফোন দিয়ে এখানকার বিশৃঙ্খলার পুরো বিবরণ জানিয়েছি।

তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন পরীক্ষা বন্ধ করা যাবে না। আমার ৩৪ জন শিক্ষক আন্দোলনে রয়েছেন। তারা ডিউটিতে যাচ্ছেন না। ১৭ জন পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু প্রথম শিফটে ৭ জন ডিউটি দিয়েছেন। এখন কাকে নিয়ে পরীক্ষা নেবো? অন্য একটি শিক্ষার্থী গ্রুপ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে আন্দোলন করছে। পরীক্ষা নিতে গেলে যদি দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যা হয় তার দায় কে নেবে? তাছাড়া প্রশ্ন যে রুমে রয়েছে সেটি বন্ধ করে শিক্ষকরা চলে গেছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাসুম বিল্লাহ বলেন,পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষকদের দাবি অযৌক্তিক। সরকারি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক এখানকার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। যশোরে ১১টি সরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়( মোমিন গার্লস স্কুল), মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মণিরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা না নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে নামসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে ও মাউশিতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষকদের আন্দোলনে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসন। যশোরের নয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আশেক হাসান মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতে শিক্ষকরা পরীক্ষা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও মঙ্গলবার কিছু শিক্ষক পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। যারা পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।