যশোরে সেনাসদস্যকে ফাঁদে ফেলে ভিডিও ধারণ ও চাঁদাবাজি নারীসহ গ্রেফতার ৩, টাকা উদ্ধার

নারীসহ গ্রেফতার ৩, টাকা উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে এক সেনাসদস্যকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার সুজলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় আদায়কৃত নগদ ১০ হাজার টাকা।

আটকরা হলেন এড়েন্দা নতুন মসজিদ এলাকার গোলাম হোসেনের মেয়ে রিনা আক্তার সোনিয়া (৩০), সুজলপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে বাইতুল আমান সাগর (২৫) এবং নজরুল ইসলাম সর্দারের ছেলে শফিকুল ইসলাম সোহাগ (২২)।

পুলিশ জানায়, সেনাসদস্য সাগর আলীর সঙ্গে রিনা আক্তার সোনিয়ার পরিচয় হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ককেই পুঁজি করে সোনিয়া ফাঁদ পাতেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে সোনিয়া ফোন করে সাগর আলীকে ধর্মতলায় আসতে বলেন। দুপুরের পর তারা দেখা করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সোনিয়া তাকে সুজলপুর এলাকার এক বান্ধবীর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই তার সহযোগীরা ওত পেতে ছিল।

সেনাসদস্যকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশের পর তাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ফেলে দিয়ে সোনিয়ার সহযোগীরা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। এরপর ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।

হঠাৎ ফাঁদে পড়ে বিপাকে পড়েন সেনাসদস্য সাগর আলী। মানসম্মানের ভয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশে ১১ হাজার টাকা আনিয়ে দেন। টাকা হাতে পাওয়ার পর প্রতারক চক্র তাকে ছেড়ে দিলেও এখানেই শেষ হয়নি।

এরপরও সোনিয়া ও তার সহযোগীরা মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করে আরও ২৫ হাজার টাকা দাবি করতে থাকে। চাপে পড়ে সাগর আলী শেষ পর্যন্ত পুলিশের শরণাপন্ন হন।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করে কোতোয়ালি থানার এসআই আল আমিন হোসেনের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সুজলপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় রিনা আক্তার সোনিয়া, বাইতুল আমান সাগর ও শফিকুল ইসলাম সোহাগকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় আদায়কৃত ১০ হাজার টাকা।

পুলিশ জানায়, সেনাসদস্য সাগর আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলের ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রিনা আক্তার সোনিয়া ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে পরে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সেনাসদস্য সাগর আলীর ঘটনা প্রকাশের পর তাদের কর্মকাণ্ড নতুনভাবে সামনে এসেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারণা ও চাঁদাবাজি রোধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে অপরিচিত কারও সঙ্গে অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।