ব্যাংক ও মোবাইল অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক প্রতারণা

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ।। ঘরে বসে সহজে আয় করার লোভ দেখিয়ে যশোরে সক্রিয় হয়েছে চীনের একটি প্রতারক চক্র। তারা স্থানীয়দের ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করছে।

প্রতারকরা রেজিস্ট্রেশন ফি, জামানত এবং বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরে অনলাইনে অবৈধভাবে ডলার ক্রয় করে চীনের বাইন্যান্স অ্যাকাউন্টে পাঠাচ্ছে। সহযোগীরা কমিশন পাচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ বিপুল ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। যশোরের শংকরপুর চোপদারপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ঘটে এই প্রতারণার ঘটনা।

ফেসবুক ও টেলিগ্রামে লিংক পাঠিয়ে তাকে বলা হয়, ‘ঘরে বসে কাজ করলে সহজে আয় করতে পারবেন।’ প্রথমে ১০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে পাঠানোর পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল অ্যাকাউন্টে মোট ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৫ টাকা পাঠিয়ে দেন।

টাকা ফেরত না পেয়ে বুঝতে পারেন, তিনি অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনার সাথে চীনের প্রতারক চক্রের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের কর্মকর্তারা।

সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের উপ-পরিদর্শক দেবব্রত ঘোষ জানান, যশোর শহরের শংকরপুর চোপদার পাড়ার মৃত আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের এলাকায় বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির একটি দোকান রয়েছে। তার ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে টেলিগ্রামের একটি লিংক পাঠিয়ে দেয় প্রতারক চক্র।

বলা হয়, আপনি লিংক অনুসরণ করে কাজ করলে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। প্রথমে তাকে ১০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে পাঠাতে বলা হয়। ওই টাকা পাঠানোর পর তাকে নির্দেশিত কিছু কাজ করতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুসরণ করার পর ১০ হাজারের সাথে আরো ৭ হাজার যুক্ত করে মোট ১৭ হাজার টাকা জাহাঙ্গীর আলমের নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বরে পাঠিয়ে দেয় প্রতারক চক্র।

এভাবে তাকে লোভদেখিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারক চক্র। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় বিভিন্ন সময় প্রতারক চক্রের দেওয়া বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে মোট ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৫ টাকা পাঠিয়ে দেন

জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ওই টাকা এবং কোনো আয়ের টাকা নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত না পাওয়ায় তখন জাহাঙ্গীর আলম বুঝতে পারেন, তিনি অনলাইন প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর আলম কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল।

উপ-পরিদর্শক দেবব্রত ঘোষ জানান, প্রতারক চক্রের দেওয়া বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এরই সূত্র ধরে তারা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিন শেখ, জাহিদুল ইসলাম ও এনামুল হক নামে ৩ যুবককে আটক করেন।

টাকা পাঠানো বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে এদেরও অ্যাকাউন্ট ছিলো। প্রতারক চক্রের দেওয়া এই ৩ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৭ লাখ ২২ হাজার ৬৪০ টাকা পাঠিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। বাকী টাকা আরো কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিলো।

তিনি বলেন, আটক ৩ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন, অনলাইনের মাধ্যমে চীনের একটি প্রতারক চক্রের সাথে তাদের পরিচয় হয়। ওই চক্রের কাছে তারা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছেন।

এভাবে অন্তত ১শ’ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়েছে চীনের প্রতারক চক্র। তাদেরকে বলা হয়েছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা হবে তার মধ্যে কিছু কমিশন পাবেন তারা। এছাড়া কমিশনের টাকা রেখে বাকী টাকায় অনলাইনে ডলার ক্রয় করে চীনের প্রতারক চক্রের দেওয়া বাইন্যান্স অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা।

উপ-পরিদর্শক দেবব্রত ঘোষ আরো জানান, অনলাইনে বাইল্যান্সের অ্যাপ আছে। ওই অ্যাপ লগইন করে যে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। বাইল্যান্সের ওই অ্যাকাউন্টে মানুষ গোপনে টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করে জমা করে রাখে। আবার প্রয়োজনের ডলারকে টাকায় রূপান্তরিত করে ফের নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এনে উত্তোলন করেন।

বাইল্যান্স অ্যাকাউন্ট আসলে কী ধরনের অ্যাকাউন্ট এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আসলে অনলাইন ভিত্তিক একটি অবৈধ অ্যাপসের অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুললে দেখা যাবে, অবৈধ প্রক্রিয়ায় সেখানে অনেক অ্যাকাউন্টধারী ডলার বিকিকিনি করছেন। মানুষ তার কালো টাকাকে গোপন করে রাখতে সেখান থেকে ডলার ক্রয় করে বাইল্যান্স অ্যাকাউন্টে রেখে দেন। যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধরতে পারেনা।