নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর)॥ খুলনা-যশোরের দুঃখ বলে পরিচিত ‘ভবদহ’ অঞ্চল ফের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৫০টি গ্রাম পানিবন্দী হয়েছে। প্রবল পানির চাপে ভেছে মাছের ঘেরের ঘের। বেরিয়ে গেছে প্রচুর টাকার মাছ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
যশোর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এখানে গত জুনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার। আর জুলাইয়ের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ভবদহের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়ে পানি উপচে পড়েছে গ্রামে ঢুকেছে।

উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্দিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে।

সুন্দলী গ্রামের কৃপাচার্য ধর বলেন, হঠাৎ পানির চাপে আমার ঘেরের পাড় ধসে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব মাছ বের হয়ে গেছে।

পায়রা গ্রামের মোস্তফা কামাল বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের সব ঘের পানিতে ডুবে গেছে। লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক গ্রামে ঘরের ভেতর পানি উঠেছে। স্কুলের মাঠে হাঁটুসমান পানি জমে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক প্রতিষ্ঠানে। উপাসনালয়েও পানি প্রবেশ করেছে।

অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অতিবৃষ্টিতে ২৮৪টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, শ’শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, নির্দেশনা পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আমডাঙ্গা খালের কাজ দ্রুত শুরু না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। পাশাপাশি স্লুইসগেট সবগুলো খুলে দিলে পানি দ্রুত নামতে পারতো।
সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী অভিযোগ করেন, ২১ ভেন্টের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। সব গেট খুলে দিলে আরও বেশি পানি নামতো।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। একইসাথে খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট-পাটা ফেলে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী জানান, শিগগিরই ভবদহ অঞ্চলের ছয়টি নদী প্রায় ৮১ কিলোমিটার খননের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা দুই-এক মাসের মধ্যে শুরু হবে।