জনগণকে বিভ্রান্ত করতে কিছু মহল পিআর পদ্ধতি নির্বাচন চায় : মেজর (অব.) হাফিজ

0

খুলনা ব্যুরো ॥ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচনে হয়তো জনগণ আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যা করেছে বিএনপির কর্মীরাও তাই করবে মনে করলে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ১৫ বছর টিকেছে, আমরা ১৫দিনও টিকবো না। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে কাজ করতে হবে। প্রতিটি নেতাকর্মীকে শহীদ জিয়ার আর্দশে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা-নিষ্ঠার সাথে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।

শনিবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাব ব্যাংকুয়েট হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহিদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে, তারা বীরের জাতি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিহাস বিকৃত হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, আওয়ামী লীগ কখনো চিন্তা করেনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা ভয়াবহ গণহত্যার মাধ্যমে এদেশকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। এই সময় কোনো রাজনীতিককে পাওয়া যায়নি। তখন চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এদেশের স্বাধীনতা এনেছেন। কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অন্ধকারে রয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যুদ্ধের পর শেখ মুজিব যেমন বাকশাল প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা করেছিলেন, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকেও ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগরীর সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।

মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, আমি গর্ব করে বলতে পারি, বিএনপি ও আমাদের হাজারো নেতা-কর্মী একাত্তরের মতো ২০২৪ সালেও বুক পেতে দিয়েছেন। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন লুঙ্গি ও গামছা পরা খেটে খাওয়া সাধারণ বাঙালি। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখা গেল, বড়লোকের ছেলেরা মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে নিয়েছে।

নির্বাচন ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ড. ইউনূস অভিজ্ঞ মানুষ হলেও তার উপদেষ্টা পরিষদের অনেকের রাষ্ট্র চালানোর যোগ্যতা নেই। কেউ কেউ গদি ছাড়তে চাননি। কেউ কেউ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন যে পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাব না, কেউ কেউ বলছেন বিচার ছাড়া নির্বাচনে যাব না, আবার কেউ বলছেন সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আমরা আপনাদের বলি- দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনারা সকলে আসুন, আগামী ২০২৬ সালের নির্বাচনে আমরা সকলে একসাথে অংশগ্রহণ করি।

দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এই প্রশ্নে সম্মত হয়েছে যে- স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বিএনপি সেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাথে ঐক্যমত হয়েছে। আবার যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল, তারা বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ লোকজন বসিয়ে দিয়েছে। তারা পিআর সিস্টেমে ভোট চায়। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভব নয় বলে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না কল্পকাহিনী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।

জুলাই সনদে পাকিস্তান গঠনের কথা নেই বলে অভিযোগ তুলছে। অথচ এই জামায়াতই তখন পাকিস্তান রাষ্ট্র চায়নি। আমরা বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন চাই। জনগণ সরাসরি ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেনি। গণতন্ত্রকে তারা ছুড়ে ফেলে দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে।