কেশবপুরে তিনটি নদী ও ১০টি সংযোগ, খাল পুনঃখনন না হওয়ায় বন্যার শঙ্কা

0

জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর) ॥ কেশবপুরে তিনটি নদী ও ১০টি সংযোগ খাল পুনঃখনন না হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন এ জনপদের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, এলাকায় বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৩ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা অনুমোদন হয়নি। ফলে বানভাসীদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, কেশবপুরের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নদী-খাল খননসহ নদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন ও পোল্ডারে আবদ্ধ নদ-নদী উন্মুক্তের দাবি জানিয়ে আসছেন। গত বছরের ভারী বর্ষণে এ উপজেলার ১০৪ টি গ্রাম, ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ লাখ লাখ টাকার কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, কেশবপুরসহ মনিরামপুর উপজেলায় বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদীর শাখা দেলুটি হয়ে শিবশা নদী দিয়ে সাগরে পতিত হয়। এর সংযোগ নদী রয়েছে এ উপজেলার আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী। যা মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। পোল্ডারের কারণে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে এসব নদীতে জোয়ার-ভাটা ওঠে না। ফলে নদীগুলো পলিতে ভরাট হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলে জনগণকে আবারও ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করতে হবে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, হরি নদীর খর্নিয়া ব্রিজ থেকে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার, হরি নদীর শাখা আপারভদ্রার কাশিমপুর থেকে মঙ্গলকোট ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ও বড়েঙ্গার তিন নদীর মোহনার জিরো পয়েন্ট থেকে কেশবপুর ও মনিরামপুর হয়ে রাজগঞ্জ রোর্ড পর্যন্ত হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে বর্তমান মৃত প্রায়। বর্ষার অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্যে নদীগুলো পুনঃখনন জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিন নদী মোহনার বাসিন্দা বড়েঙ্গা গ্রামের সুকুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতি শুষ্ক মৌসুমের ১৫ মাঘ থেকে নদীতে পলি আসা শুরু হয়। এজন্যে ১৫ মাঘের আগেই আপারভদ্রার কাশিমপুরে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু পাউবোর বিলম্বে বাঁধ দেওয়ার কারণে পলিতে নদী ভরাট হয়ে যায়। ফলে নদী খনন জনগণের কোনো কল্যাণে আসে না।

হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি মহিরউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের আগে এ অববাহিকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘনমিটার পলি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে ২ থেকে আড়াই কোটি ঘনমিটারে দাঁড়ায়। পলির পরিমান ঠিক থাকলেও পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। একই সাথে ভূমির নিম্নগমন ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় নদী সচল রাখতে টিআরএম বাস্তবায়ন জরুরি।

কেশবপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি নদী ও ১০টি খাল পুনঃখননে ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তা অনুমোদন হয়নি। যে কারণে এ বছর নদী খনন সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর মাঝখান দিয়ে খনন করে পানি সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার খনন কাজ শুরু হয়েছে। এসব নদী-খাল খনন সম্পন্ন হলে এলাকা বন্যা ও জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।